Skip to main content

বক্তৃতা

কুরআন এবং হাদিসে রাসুল হলো বিজয়ী শ্রেষ্ঠ সাহিত্য

মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন


আমার বলবার কথা যতোটুকু এখানে সেটা হলো, আমরা এ ধারায় একেবারে নতুন নয়। আশির দশকে এসে বা নব্বই দশকে এসে আমরাই নতুন করে শুরু করেছি এমন না। বরং কাজ অনেক পিছন থেকে চলে আসছে। মেশকাত শরিফের তরজমা করেছেন মাওলানা নুর মুহাম্মদ আযমী। ভুমিকায় লিখেছেন হাদিসশাস্ত্র সম্পর্কে। হাদিসের তথ্য-ইতিহাস এনেছেন। অথচ ঠিক এমন সময় ইউনিভার্সিটির কোনো একজন প্রফেসরের পক্ষে খুব সহজ ছিলো না খুব সহজেই কোনো গ্রন্থ রচনা করবেন। সুতরাং যে সময়টাতে করেছেন সে সময়টাকেও দেখবার প্রয়োজন আছে। কতোটা তথ্য-উপাথ্য তখন সংগ্রহ করা যেতো। আমি এ কারণেই বলি, অনেক সময় আমরা তারুণ্যের উত্তাপে আমাদের পূর্বসুরীদের নাকচ করে দিই। এটা ভালো নয়, সঠিক নয়, সম্ভ্রান্ত সন্তানের পরিচয় নয়।


[২৩ আগস্ট ১৩ ছিলো বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সাহিত্য সভা ও ঈদপুনর্মিলনী। এখানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন গদ্যশিল্পী মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন। তিনি সভায় তরুণদের পঠিত লেখার ওপর আলোচনা করেন। আলোচনায় প্রাসঙ্গিকভাবেই ওঠে আসে আলেমদের লেখালেখি, গাইডলাইন, সাহিত্য পরিক্রমা, কাজের ভেতরে সময়কে ধারণ করা এবং সৃষ্টিতে-বিশ্বাসে স্বাতন্ত্রের ছাপ রাখার মতোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নবধ্বনির নবীন-তরুণ পাঠকদের জন্য সেই বক্তৃতা উপস্থাপন করা হলো। শ্রতিলিখন করেছেনÑ কাসেম ফারুক।]


হামদ ও সালাতের পর।
বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম আয়োজিত আজকের এই সাহিত্য সভা ও ঈদপুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি, আয়োজকবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথি ও ছাত্র বন্ধুরা, সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আজকের এই সাহিত্য সভায় আমাকে পঠিত গদ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। তাই পঠিত লেখার দুএকটি লাইন পুনর্পাঠের পরেই আমি আলোচনায় আসবো, ইনশাআল্লাহ। তারপূর্বে বলে রাখা ভালো, এখানের সমস্ত পঠিত লেখাই শ্রোতা হিসেবে আমার ভালো লেগেছে। সবাই অনেক সুন্দর লিখেছেন। আমার হাতে একটি গল্প আছেÑ আকাশ দেখার শখ। লেখার একজায়গায় লেখক লিখেছেন, বিশেষ করে তাবলিগ জামাতের মেহনতে অনেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, পড়তে হয়। দাওয়াতি লাইনে মেহনত করে তাবলিগের সুবাদেই নাঈমের মাদরাসায় আসা। ওর বাবা যেদিন প্রথম তিনদিন তাবলিগে সময় দিয়ে এলেন তখন থেকেই পাকা ইরাদাÑ নাঈমকে মাদরাসায় পড়াবেন। ফলে ও এখন মাদরাসার তালেবুল ইলম।
লেখাটার যতোটুকু আমি পাঠ করলাম এর ভেতরের শব্দ সম্পর্কে একটি বিষয় আলোচনা করতে চাচ্ছি, সেটি হলো, সাহিত্যের পথে আমাদের যাত্রাটা ঠিক নতুন নয়। আমাদের এদেশের ওলামায়েকেরাম যারা আগে থেকে সাহিত্যচর্চা করেছেন, পরিমাণে তাদের সংখ্যা কম হলেও তা অত্যন্ত শক্তিশালী স্বীকার করতে হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন একসময় ছেপেছে মাওলানা নূর মুহাম্মদ আযমীর রচনাবলী। যদি কারো সংগ্রহে থাকে পড়ে দেখবেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উন্মুক্ত পাঠাগারেও পাওয়া যায়। বাংলাদেশ একাডেমী ছেপেছে মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর রচনাবলী। দুখণ্ডে। কাজ করে গেছেন মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহিম। একটা দুটো নয়, প্রচুর কাজ করেছেন। তারপর কাজ করেছেন মাওলানা মহিউদ্দীন খান। এখনও বেঁচে আছেন। অনেক দীর্ঘ তাদের কাজের পরিধি। কাজ করেছেন মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। সংখ্যা অনেক নয় হয়তো, কিন্তু মানটা যদি তুলনা করা হয় তাহলে এমন নয় যে আমাদের মুখ ফিরিয়ে নিতে হয়। গদ্যের শক্তি এবং লেখা হাজার বছর টিকে থাকবার জন্যে তথ্য-উপাথ্য, বিচার ও যুক্তি সমন্বয়ক এমন সাহিত্য তারা রচনা করে গেছেন, এখানে আরেকজনের নাম উল্লেখ করতে হয় তিনি শামছুল হক ফরিদপুরী রহ., তারা সংখ্যায় কম হোক কিন্তু এতো বিশাল ও সমৃদ্ধ জ্ঞানের ভাণ্ডার আমাদের দিয়ে গেছেন যেটা গর্ব করার মতো। হ্যাঁ, একটা ক্ষেত্রে আমাদের বলা যেতে পারে, আমাদের আরেকটু সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন ছিলো যে বিষয়ে সেটা হলো, যথাযথভাবে উপস্থাপন অব্যাহত রাখা। এই অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে কখনও কখনও দেখা গেছে, আমরা আর দশটা জরুরি কাজের ভেতরে এটাকে ততোটা গুরুত্ব দিইনি, পরবর্তী সময়ের লোকেরা যতোটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন। আমার কথাটা আগে বুঝতে হবে। অনেক সময় এমন হয়, পরিস্থিতির কারণে এক সময়ের মানুষ অথবা দায়িত্বশীলগণ একটা কাজকে যতোটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন পরবর্তী জেনারেশন এসে দেখে যে এতোটা গুরুত্ব তো না দিলেও চলতো। আবার তারা যে বিষয়টাকে উপেক্ষা করে যান, পরবর্তী জেনারেশন এসে ভাবে, এই বিষয়টিকে কেন উপেক্ষা করা হলো। এখানে সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, আমি যখন কথা বলছি, যে সময়টা সম্পর্কে কথা বলছি সে সময়টাতে আমরা ছিলাম না। সুতরাং ওই পরিস্থিতিতে কেন তারা এটাকে গুরুত্ব দেননিÑ বলতে পারবো না।
আমার বলবার কথা যতোটুকু এখানে সেটা হলো, আমরা এ ধারায় একেবারে নতুন নয়। আশির দশকে এসে বা নব্বই দশকে এসে আমরাই নতুন করে শুরু করেছি এমন না। বরং কাজ অনেক পিছন থেকে চলে আসছে। মেশকাত শরিফের তরজমা করেছেন মাওলানা নুর মুহাম্মদ আযমী। ভুমিকায় লিখেছেন হাদিসশাস্ত্র সম্পর্কে। হাদিসের তথ্য-ইতিহাস এনেছেন। অথচ ঠিক এমন সময় ইউনিভার্সিটির কোনো একজন প্রফেসরের পক্ষে খুব সহজ ছিলো না খুব সহজেই কোনো গ্রন্থ রচনা করবেন। সুতরাং যে সময়টাতে করেছেন সে সময়টাকেও দেখবার প্রয়োজন আছে। কতোটা তথ্য-উপাথ্য তখন সংগ্রহ করা যেতো। আমি এ কারণেই বলি, অনেক সময় আমরা তারুণ্যের উত্তাপে আমাদের পূর্বসুরীদের নাকচ করে দিই। এটা ভালো নয়, সঠিক নয়, সম্ভ্রান্ত সন্তানের পরিচয় নয়।
এরপর আমরা আসি ধারাবাহিকতায়। আমাদের বড়ো একটা গুরুত্ব দাঁড়ায় সময়কে চেনার এবং কাজের ভেতরে সময়কে ধারণ করার। কাজের ভেতরে কথাটাকে ব্যাপক অর্থে নিতে হবে। যেমন, এখন থেকে পঞ্চাশ বছর আগে একটা মাদরাসা যেভাবে গড়ে তোলা হতো এখন ঠিক সেভাবে গড়ে তোলা হবে না। তখন গড়ে তোলা হতো তখনকার কালটাকে ধারণ করে। আর এখন গড়ে তুলতে হবে এই সময়টাকে ধারণ করে। এখন থেকে ত্রিশ বছর আগে আমরা যখন ঢাকায় এসেছি তখন আমরা মসজিদগুলোতে যে আলোচনা শুনেছি এবং মানুষদের যে আলোচনা শুনে মুগ্ধ হতে দেখেছি ঠিক সেই সময়ের আলোচনা যদি ক্যাসেট করে এখন দেয়া হয় আমার মনে হয় না সে মুগ্ধতাকে আমরা এখনো ধরে রাখতে পারবো। কারণ, সময়। যখন সময় বদলাচ্ছে তখন সময়কে ধারণ করে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জাগতিক সবকিছু এগিয়ে যাচ্ছে। এটা ইসলামেরও চরিত্র। আমরা আমাদের শিক্ষা, আমাদের সভ্যতা, আমাদের নির্মাণ, আমাদের চিন্তা সকল ক্ষেত্রে দেড় হাজার বছর ধরে এভাবেই আমরা এগিয়েছি। এখন লেখালেখিতে আমাদের সময়কে ধারণ করার বিষয়টা কী? সময়কে ধারণ করার বিষয়ের মধ্যে একটা বড়ো বিষয় হলো, লেখালেখিতে বাক্যের কাঠামো এবং বাক্যের নির্মাণের জন্য শব্দ নির্ণয় নির্বাচন। শব্দ চয়ন এবং সেই সঙ্গে বাক্যের কাঠামো নির্মাণ। এতে আমাদের অবশ্য একটু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এবং এ সমস্যা বরাবরই হয়। সকলের ক্ষেত্রেই হয়। আমাদের এ দেশে যখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এই অঞ্চলে সাহিত্য সাধনার জন্য বাংলা একাডেমী গড়ে ওঠে। আবার সেই সঙ্গে সাহিত্যে ইসলামকে প্রধান করে কাজ করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন গড়ে ওঠে। যখন বাংলা একাডেমী ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন পাশাপাশি কাজ করতে থাকে তখন স্বাভাবিকভাবেই দুই জায়গায় যারা দ্বায়িত্বশীল রয়েছেন সেই দ্বায়িত্বশীলদের মানসিক চিন্তা, আদর্শ এবং সংস্কৃতির ব্যবধানের কারণে উভয় প্রতিষ্ঠানের চরিত্রগত নানা রকমের ব্যবধান গড়ে ওঠেছে। অধ্যাপক আখতার ফারুকের বেশ কিছু লেখা আছে। বিশেষ করে নারী গন্তব্যের রাজপথ উম্মুল কুরআন ছাড়াও বেশ কিছু বই আছে যা ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশ পেয়েছে। এগুলোর ভূমিকা পড়লে পার্থক্যটা আরো পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
এই যে ভিন্নতা, দুটি ঘর এবং দুটি ঘরের নেতৃত্বে যে দুটি ভিন্নগোষ্ঠী এদের চিন্তাটা প্রতিফলিত হয় তার জন্য যে ভাষা, সেখানেও একটা বড়ো রকমের ব্যবধান গড়ে ওঠে। আর এই ব্যবধানটা একটা সময় এসে ক্রমাগত উন্নতির জন্যই। দেখা যায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন একদিক থেকে অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছে। ঠিক একই রকমভাবে উন্নতির লক্ষে ভিন্ন পথ ধরে ক্রমাগত অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছে বাংলা একাডেমী। গোড়ায় যেহেতু একটু ব্যবধান ছিলো তাই দুই এগিয়ে যাওয়ার পথটা এক ছিলো না। তাতে বাংলা ভাষার ফল কী দাঁড়িয়েছে? ফল দাঁড়িয়েছে এইÑ বাংলা একাডেমী উন্নত করতে করতে এমন জায়গায় গেছে যে, বিদেশি কোনো শব্দে থাকবে না। নবী-ওহী এরকম সবগুলোতে ি হয়ে যাবে। অনরুপ হবে । কারণ না থাকলে তো ঈ এমনিতেই থাকতে পারবে না। এটা হলো তাদের উন্নতি। আবার এ দিক থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন যখন উন্নতি করেছে তখন তাদের উন্নতির শেষ স্তর যেখানে সেটা হলো, ইসলামিক ফাউন্ডেশন অনেক কাজ করেছে, এখন ইন্টারন্যাশনাল মানের কোনো বড়ো কাজ করা দরকার ভাবছে। আন নাসয়ী। যিনি ইফাবার বিশ্বকোষ বিভাগে দীর্ঘদিন কর্মরত আছেন। বিশ্বকোষ করবার প্রধানতশব্দের মাত্রাটা ইসলামিক ফাউন্ডেশনে এমন একটা বড়ো রকমের বিভাজন সৃষ্টি করে যে, মনে হয় দূতাবাসের মতো। যেন দেশে থেকেও এদেশের নয়। কেন? এটা এ জন্য যে, হাদিসের একজন প্রখ্যাত ব্যক্তি, চিকিৎসা বিজ্ঞানের একজন প্রখ্যাত ব্যক্তি তার নাম তার পরিচয় বিশ্বকোষে আসছেÑ এটা যেহেতু একটা ইন্টারন্যশনাল বিষয় সেহেতু এখানে বাংলাদেশটাকে দেখে তার মূলটা যেন উদ্ধার করা যায়। এ জন্য বাংলা ভাষার ভেতরে এমন কিছু উন্নয়ন যুক্ত হলো, যে উন্নয়ন যুক্ত হবার কারণে বাংলা ভাষাটা একটু ব্যতিক্রম হয়ে ওঠলো। ব্যতিক্রমটা যেমন ধরুন, হজরত হাসসান বিন ইবনে ছাবিত-এর নামটি। ঘটনার বিবরণে এই নামটি যখনই আসবে, তখন হাসসান সিন দিয়ে। আবার ইমরান ইবনে হোসাইন সোয়াদ দিয়ে। এখন এই দুই নামের মাঝে সিন এবং সোয়াদের যে পার্থক্য সেটা কিভাবে করা হবে, এই বিষয়টা সামনে আসলো।
এভাবে আবার যখন আসলো, উসমান তখন  ছা-টা আসলো জযমের সঙ্গে। অন্যদিকে হাসসান বিন ছাবিত লিখতে ছাবিতের মাঝে যে ছা আছে সেখানে ছা-এর পরে জযম নয় বরং একটি আলিফ যুক্ত রয়েছে, এখানে এখন বাংলাভাষায় জযম এবং আলিফের ব্যবধানটা কিভাবে তুলে ধরা হবে। এভাবে বিদেশি শব্দগুলো যেন যে কেউ পরবর্তী সময়ে এর মূলটা উদ্ধার করতে পারেন এবং বাংলা ইংরেজি অথবা বিশ্বের যেকোনো ভাষায় অনুবাদ করতে পারেন তাতে মূলটা যেন ব্যাহত না হয়। এমন একটা গভীর চিন্তা মাথায় রেখে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিবর্ণে নির্দেশিকা আলাদা একটা প্রকল্প তৈরি করে। সেই প্রকল্পের ক্ষুদ্র একটা দৃষ্টান্ত হলো, ইংরেজিতে ু-এর বাংলা উচ্চারণ কী হবে। বাংলা একাডেমীসহ বাহিরের যারা রয়েছেন সবাই বলেন, হবে। বর্গীয়-জটা যে কী আমরা মাদরাসার ভেতর থেকে যখন বুঝতে চাই তাহলে সেটা হবে ঝা। সেই হিসেবে দিয়ে যদি কারো নাম রাখা হয় জাকির হোসাইন তবে আমাদের পড়তে হবে আমাদের উচ্চারণ হিসেবে জাকির হোসাঈন। ঠিক যেভাবে আমরা পড়ি যাকাত। অপরদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন তারা এ জায়গায় এসে বললেন, বর্গীয়-জ, এটা হলো আরবি জিম হরফের প্রতিবর্ণ। যেমন আরবি জাহান্নাম এটাকে যদি হুবহু বাংলাতে লিখতে হয় তবে বর্গীয়-জ দিয়ে লিখতে হবে। এটা যদি আমরা জাকির হোসাইনে অনুসরণ করি তবে জাকির হোসাঈন। এই এক ব্যবধান সৃষ্টি হলো। যে ব্যবধানটা কোথাও সহজ হয়। আবার কোথায়ও কঠিন হয়। সহজ ও কঠিনের অনেক দৃষ্টান্ত এখানে দেয়া যেতে পারে। যেমন সিন সোয়াদরে প্রতিবর্ণ কী হবে। ড. কাজী দীন মুহম্মদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন-এর প্রতিবর্ণ নির্দেশিকায় তুলে ধরেছেন। আমরা যখন ১৯৯২-এর প্রথম কাজ করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আসি তখন আমাদের এসব বিষয়ের বিভিন্ন বই দেয়া হয়েছে যাতে এর অনুসরণ করে লিখতে হবে। ওখানে দেখানো আছেÑ সোয়াদ লিখতে হলে -এর কানের মধ্যে একটা নকতা দিতে হবে। তাহলে এটা সোয়াদ-এর প্রতিবর্ণ হয়ে যাবে। আবার ছাবিত-এর মতো আলিফসহ লম্বা টান বিশিষ্ট শব্দে দুটো আকার পরপর ব্যবহার করতে হবে।
এই যে উন্নয়নটা, এটা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিশ্বকোষ বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য শাখার জন্য অনুসরণীয়। তবে নোকতা ও পরপর দুবার আকারের নীতি গ্রহণ করা হবে না। বরং সোয়াদ-এর প্রতিবর্ণ হিসেবে নিতে হবে। যেমন সালাত, সিয়াম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসউদ-উশ-শহীদ ভাই সুন্দর করে আমাদের বলতেন, আমাদের ইফাতে নামায নেই সালাত আছে। রোযা নেই সিয়াম আছে। তো এটা কিন্তু ক্রমাগত ওই নিয়ম থেকেই এসেছে। যাও ইফার একটা উন্নয়নের মাত্রা।
তো দুটি ধারা ও তার  উন্নয়ন সম্পর্কে কিছুটা আলাপ করাই মূলত আমার উদ্দেশ্য ছিল না; বরং এখানে পঠিত দুটো লাইনের ওপর আলোচনার প্রারম্ভিকতায় প্রাসঙ্গিকভাবে চলে এলো। এখানে ইরাদা-মেহনত-তালিবুল ইলম ইত্যাদি শব্দগুলো লেখক তার লেখায় লিখেছেন এটি কাদের অনুসরণÑএটাই আমার আজকের আলোচনার মূল বিষয়। আর আমি এতোক্ষণ যাবত যেটা বুঝাতে চেয়েছি সেটা হলো, আমাদের দেশে ভিন্ন দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় বাংলাভাষার গোড়া থেকে ক্রমাগত দুমুখো যে ধারাÑ এ শব্দগুলোর ব্যবহার তারই প্রমাণ।
এখন লক্ষ্য করার বিষয় যেটা সেটা হলো, ইফাকে কেন্দ্র করে আমাদের যারা অগ্রপথিক, মাওলানা আমিরুল ইসলাম রহ., মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী রহ., মাওলানা উবায়দুল হক রহ. থেকে শুরু করে আমাদের মনীষীরা ইফার ব্যানারে বিপুল পরিমাণে কাজ করেছেন। এতোবেশি কাজ করেছেন যে কাজের মান এবং কাজের পরিমাপ দুটোকেই যদি আমরা সামনে রাখি, তাহলে গভীর শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। পরবর্তী সময়ে এখন যারা কাজ করছে বা আগামীতে করবেÑ হাদিস শরিফের অনুবাদ, তাফসির শরিফের অনুবাদÑযে সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান করছে বা করবে এ সবের মূল হলো ওই সমস্ত কাজ, যা ইফার অধীনে আমাদের এসব ওলামায়েকেরাম করে গেছেন। এদেশে বাংলাভাষায় ইসলামি কাজের ধারা প্রথম শুরুটা হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে। তাই তার অনুসরণ ঠিক যেমন আমাদের পূর্বসুরীরা করেছেন, আমরা করেছি, তেমনি লেখাটি পড়ে মনে হলো, কোনো এক ছোটোভাইও এই অনুসরণটা অব্যাহত রেখেছে, লেখাটিতে এসব বিদেশি শব্দ ব্যবহার করে।
আমার কথা হলো, আজকে ২০১৩ সালের সময়টাকে ধারণ করে সাহিত্য রচনা করতে হলে কোন সাহিত্যকে আগলে ধরে সামনে এগুতে হবে। দেখুন, যদি আমরা একেবারে আমাদের শেকড়ে যাই, তাহলে যেটা দেখতে পাবো হজরত ওমর রা. সাহাবায়েকেরামদের পরামর্শ দিয়েছেন যে, তোমরা এবং তোমাদের সন্তানরা আরবদের জাহেলি যুগের দেওয়ান মুখস্ত করো। তাদের যে কাব্য সংকলন রয়েছে সেগুলো আয়ত্বে আনো। কেন? এটা এজন্য যে, আরবদের তৎকলীন যে কাব্যশক্তি, কাব্যপদ্ধতি ও কাব্য অহঙ্কার সেটাকে পরাজিত করে তারই ধাঁচে কুরআনে কারিম নাজিল হয়েছে। তাদাব্বুরে কুরআনের লেখক মাওলানা আমিন আহসান ইসলামি তিনি কিতাবের ভূমিকায় দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। যার মূল বক্তব্য হলো, প্রাচীন আরবি সাহিত্য জানা ব্যতিত তাফসির বোঝার যে আটটি শর্তের একটি, আরবিভাষায় পাণ্ডিত্ব অর্জন করাÑ তা অর্জন করতে পারবে না। যে কারণে কুরআনও বুঝতে পারবে না।
এখন যেটি বুঝবার বা ভাববার সেটি হলো, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম যে সময়টাতে এসেছেন ওই সময়টার যারা কবি, ওই সময়টার যারা সাহিত্যিক তাদের সাহিত্যটাকে পরাজিত করে তাদের সাহিত্যের মানোত্তীর্ণ কুরআনে কারিম নাজিল হয়েছে। তিনি যে বলেছেন আনা আফসাহুল আরব এখানে আরব-এর শুরুতে যে আলিফ লাম রয়েছে যারা মুখতাসার পড়েছেন, নুরুল আনোয়ার পড়েছেন এবং বালাগাতের অন্যান্য কিতাব পড়েছেন তারা জানেন, অলিফ লামের মধ্যে আসল হলো আহদে খারেজি। এই আলিফ লাম আহদে খারেজির অর্থ হলো, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম সমকালীন শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। অর্থ হবে, আমার কালের যে বড়ো বড়ো কবি-সাহিত্যিকরা রয়েছে আমি হলাম তাদের সর্বসেরা। এটাই হাদিসের মূল অর্থ। তবেই স্পষ্ট বোঝা যায়, কুরআনে কারিম ও রাসুলের হাদিস সে যুগের সব কবি-সাহিত্যিকদের পরাজিত করে তবে বিজয়ী হয়েছে। এখানে মনে রাখতে হবে, যখন যুদ্ধ হয় যুদ্ধের মধ্যে সামঞ্জস্যতা জরুরি। একদিকে হাতি অপরদিকে শিয়াল এটা কোনো যুদ্ধ হলো না। হয়তো দুদিকেই শিয়াল হবে নয়তো উভয়দিকেই হাতি হবে। তো এমনি কুরআন এবং হাদিসে রাসুল হলো বিজয়ী শ্রেষ্ঠ সাহিত্য।
এটাকে যদি আমরা মূলনীতি ধরে নিই, তবে স্বীকার হয়ে যে কথাটা আসে, বর্তমানে আমরা যে কালটায় বসবাস করছি, দেখতে হবে সে কালটা কাকে কবি বলছে। কাকে সাহিত্যিক বলে তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছে। কাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিচ্ছে। কাকে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করছে। সে আমার বন্ধু হোক, হোক সে আমার শত্র সেটা দেখবার বিষয় নয়, দেখবার বিষয় হলো, সময়ের সার্বজনীন কবি বা সাহিত্যিক তিনিই। তাকেই আমার সময়ের শ্রেষ্ঠ কবি বা সাহিত্যিক বলে মেনে নিতে হবে। কারণ, সময় তাকেই বলছেÑ তোমার হাত ধরে বাংলাভাষা দাঁড়িয়েছে। এখন যুদ্ধ করে বিজয়ী হতে হলে তাকে অনুসরণ করতেই হবে। এটা আমাদের জন্য খুব বেশি জটিল তা নয়। বর্তমানে কওমি মাদরাসায় সাহিত্যের ক্ষেত্রে যে সিলেবাস করা হয়েছে এবং সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. যিনি শেষে এসে আধুনিক যে সংকলনগুলো করেছেন সেখানেও তিনি জাহেলি যুগ থেকে নিয়ে একেবারে ড. ত্বহাদের যুগ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। মোস্তফা মানফুলুতি এবং আহমদ হাসান যাইয়াদদের কাল পর্যন্ত নিয়েছেন। সুতরাং সাহিত্যচর্চা করতে গিয়ে কার মাথায় টুপি আছে কি নেই, সে আজানকে কবিতায় শ্রদ্ধা জানায় কি জানায় না, সে যখন নামাজের কথা আনে শ্রদ্ধায় আনে না খোঁচা দিতে আনেÑতা দেখবার বিষয় নয়। দেখবার বিষয় হলো, বর্তমান সময়ে আমার ভাষার কে নেতৃত্ব দিচ্ছে। নিতে হবে তার কাছ থেকেই। আরবরাÑযারা সহজে অনারবিদের গ্রহণ করতে চায় না, ভাষাসাহিত্যের মতো জটিল বিষয়ে তারাও শেষপর্যন্ত মেনে নিতে বাধ্য আলী মিয়া নদভীর মতো অনারবিদের আরবি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে। বাধ্য হয়েছে হাসান যাইয়াদের সংজ্ঞা মেনে নিতে, যে ভাষার কবিতা সাহিত্য আপনি নিচ্ছেন ওই ভাষার তৎকালীন শ্রেষ্ঠ কবি সাহিত্যিকদের বর্ণনাটাই হলো সাহিত্যের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তারা তাদের সময়ে ভাষাটাকে যে জায়গায় এনে দাঁড় করাবেন ওই সময়ের ওটাই শ্রেষ্ঠ। এটা একটা মূল কথা। এটাকে সর্বপ্রথম আমাদের হজম করতে হবে। যদি সাহস করে হজম করতে না পারি তাহলে করার কিছুই থাকবে না। হবে কী? আমাদের বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের বহু সাধারণ জনগণ বিভিন্ন সময় ইসলাম সম্পর্কে নানা রকম ফতোয়া দিয়েছেন। জনগণ নেয়নি। কেন নেয়নি? কারণ, তারা ফতোয়া দেয়ার মানুষ নন। ফতোয়ার একটা নির্দিষ্ট জায়গা আছে। সেখান থেকে ফতোয়া আসতে হবে। যাকে আমরা সহজে মূলধারা বলি। এমনই লেখালেখির মূলধারায় আসতে হলেও মূল অনুসরণ করে প্রথমে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এখানে অনেকে বলতে পারেন, বাংলাভাষার মূল কী ও তার মূল কর্ণধার কারা? এখন ড. আশরাফ সিদ্দিকী বা ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বা এমন আমাদের প্রবীণরা বাংলাভাষার আদিঅন্ত খুঁজতে গিয়ে যেটা বলবেন, বাংলাভাষা একসময় আরবি প্রতীকে লেখা হতো। পুরাণে চেরাগের মধ্যে আবুল হাসান আলী নদভী রহ. সুলাইমান নদভীকে যেটা লিখেছেন এটা অনেক লম্বা কথা। যার সারাংশ হলো, বাংলা একসময় আরবি বর্ণে লেখা হতো। সেটা দেখবার বিষয় নয়। হতে পারে বাংলাভাষাটা আমাদের। মুসলমানদের। কিন্তু এ ভাষাকে বাহ্যত লালন করেছে কারা? এ ভাষাকে দীর্ঘদিন পুষেছে তারা যারা আমাকে বিশ্বাস করে না। যারা আমাদের ধর্মকে বিশ্বাস করে না। সুতরাং বাংলাভাষা যাদের হাত ধরে আজকের জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে বিদ্যাসাগর থেকে শুরু করে আজকের কবি আল মাহমুদ রফিক আজাদ নির্মলেন্দু গুণ ফরহাদ মজহার ও হুমায়ূন আহমেদ পর্যন্ত এসেছে। ইমদাদুল হক মিলন পর্যন্ত এসেছে। এইযে আজকের যে দাগটা, এইযে একের পর এক ধাপ, আমাকে প্রথমে এর ইতিহাসটা দেখতে হবে। জানতে হবে।
আমি আপনাদেরকে বলবো, আমাদের বাংলাদেশের প্রখ্যাত প্রয়াত বড়ো রকমের একজন পাজি মনীষী ছিলেন আহমদ ছফা। সবাই ভয় করতো। সকলের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি যাই করতো কিন্তু তার ছিলো অসাধারণ প্রতিভা। তার উপলক্ষের লেখা বইটি পুরোটাই মজার জিনিস। পাঁচমিশালি খিচুরির মতো। সারারাতদিন পড়লেও সমস্যা হয় না। সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা তিনি এনেছেন। তার মধ্যে একটি কথা হলো, কোনো সন্দেহ নেই ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বহুভাষাবিদ ছিলেন। বিজ্ঞানী ছিলেন। আসলেই সাহিত্যিক ছিলেন? এমনই ড. দীন মুহাম্মদ ভাষাবিজ্ঞানী ছিলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটির। কিন্তু সাহিত্যিক ছিলেন কিনা? অবশ্যই এখানে একটা প্রশ্নবোধক চিন্হ রয়েছে। বোঝা যায় ভাষাবিজ্ঞানী হওয়া এক কথা, ভাষার মাস্টার হওয়া আরেক কথা আর কালোত্তীর্ণ কবি হওয়া সাহিত্যিক হওয়া ভিন্ন কথা।
আল মাহমুদ এখনও চোখ বন্ধ অবস্থায় বেঁচে আছেন। মূর্খ। আমাদের দেশে এখন যে আলোচনা চলছেÑআর অল্পদিনের মধ্যে প্রথম শ্রেণি যেটা হয়ে যাবে সেটা হলো ক্লাস এইটÑ সেটাই সে পাশ। নাইনে সবে উঠেছিলেন। পড়া হয়নি। কিন্তু এটাতো সত্য বাংলাভাষাকে সে জয় করে নিয়েছেন। ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত। যে কেউ অস্বীকার করুক, না মানুক আল মাহমুদ সময়ের সেরা কবি। এই অর্জনটা যেমনি আল্লাহ তায়ালা তাকে দান করেছেন, তেমনি তিনি শক্তি দিয়ে শ্রম দিয়ে অর্জন করেছেন।
এইযে ভাষাচর্চার ধারাবাহিকতা, এতে আমাদের লোকও কমবেশ ছিলেন। কিন্তু সত্যি কথা হলো, তারা বাংলাভাষায় ইসলামের অনেক বড়ো খেদমত করেছেন, কিন্তু সেটা কালোত্তীর্ণ সাহিত্যের মানদণ্ডে খুব বড়ো নয়। এবং কেউ যদি আমাকে মাফ করে দিতে পারেন তার জন্য আমি বলতে পারি এ কথা যে, মূলধারায় সাহিত্যের কাজ করে তার সময়ের স্বীকৃতি পাননি আমাদের এ ধারার কেউ। একটা বড়ো কথা বলে ফেললাম। টুপি মাথায় দিয়ে এবং ইসলামকে উপজীব্য করে বাংলাভাষায় বলা যায় প্রথম যে দুজন দাপটের সঙ্গে নেমে এসেছেনÑকবি ফররুখ আহমদ, সৈয়দ আলী আহসান। দাপট, ক্ষমতা, সৃষ্টি দিয়ে, নির্মাণ দিয়ে তারা বাংলাভাষাকে জয় করেছেন। ঠিক এর আগে কাউকে খুঁজতে গেলে অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হবে। আর এতো কাঠখড়ি পুড়িয়ে যা পাওয়া যাবে ব্যবসায় পোষাবে না। এটাই আমার কাছে একশোভাগ সত্য।
সুতরাং বলবার কথা হলো, যেভাবে সাহিত্য সাধনার জন্য আমরা মুতানাব্বি পড়ি, আসসাবহুল মুআল্লাকাত পড়ি, সাহিত্যের জন্য ত্বহা হুসাইনকে পড়ি। ত্বহা হোসাইন কে? আহমদ হাসান জাইয়াদ কে? আত্তাফসিরুল মুফাস্সিরিন পড়, তাফসিরুল মিযান পড়Ñ পরিচয় পাওয়া যাবে। এরা হলো ওই শ্রেণির মানুষ যারা বলে, মক্কা বিজয়ের পর মক্কার কেউ-ই মুসলমান হয়নি। যাদেরকে আমরা মুসলমানদের তালিকায় দেখি তারা সকলেই বাঁচার জন্য আত্মসমার্পণ করেছেমাত্র। কত্তো বড়ো বেঈমান, গাদ্দার! এর চাইতে বড়ো নিকৃষ্ট বদবখত আমাদের শিবিরে নেই। কিন্তু আবুল হাসান আলী নদভী রহ. তাদের লেখা এনেছেন। কেন? কেননা তাদের বিশ্বাস যাই হোক, সমকালীন আরবি সাহিত্য তাদের পা ধরে এগিয়েছে। তাদের বাদ দিয়ে আরবি সাহিত্য হয় না। মোস্তফা মানফুলুতিকে বাদ দিয়ে আরবি সাহিত্য পূর্ণতা পায় না। সুতরাং আবদুল কাদের রায়পুরী রহ.-এর খলিফা হয়ে, মাওলানা ইলিয়াস রহ., মাওলানা জাকারিয়া রহ., আহমদ আলী লাহোরী রহ., শায়খুল ইসলাম মাদানী রহ.-এর ছাত্র হয়ে যদি আবুল হাসান আলী নদভী রহ. মাফ করে দিতে পারেন, তাহলে মনে হয় আমরাও মাফ করে দিয়ে এই কথা বলতে পারি যে, সাহিত্যের জন্য হুমায়ুন আজাদের বই পড়লে অসুবিধে নেই। কম হোক আসর থেকে মাগরিবের এই অবসর সময়টাতেতো অন্তত সমস্যা নেই।

মোটকথা, সাহিত্যের এই যে একটা ধারা, এই ধারায় এখন যাদের হাতে ভাষাটা লালিতপালিত হচ্ছে আমার মনে হয় নিতে হবে তাদের হাত থেকেই। তারা শব্দটাকে কিভাবে ব্যবহার করে, তারা হলে কি ইরাদা ব্যবহার করতো না অন্যকিছু। তাদের বাক্য নির্মাণের চরিত্রটা কী। ভাবটাকে কীভাবে ব্যক্ত করে। খুব ভালো। হাজার কোটিবার ভালো। শ্রদ্ধা জানাই আমাদের অঙ্গনের এমন লেখকদের যাদের লেখার শিরোনাম বা প্রথম দুলাইনের দুএকটি শব্দ দেখামাত্রই বোঝা যায়, এটা কোনো একজন মুত্তাকি পরহেজগার লেখকের লেখা। খুব ভালো, তবে সত্যিকারার্থে এখন যে সময়টাতে আমরা আছি সে সময়ের সর্বস্তরের পাঠকের কাছে পাঠ উপযোগী করতে হলে অবশ্যই তা আধুনিক ও সাহিত্যসমৃদ্ধ হতে হবে। হ্যাঁ, ভিতরের মেসেজ এবং মেটারটা থাকবে আমাদের; বাকি ভাষার স্টাইল, বলবার পদ্ধতি, শব্দ চয়ন, বাক্য কাঠামো, শিল্পÑসবটাই নিতে হবে তাদের থেকেÑ যারা বাংলাভাষাকে আত্মস্থ করেছে। যদি লেখাটি এমন হয় তবে অবশ্যই সম্পাদক, প্রকাশক বা বামঘেঁষা বিশেষজ্ঞগণ পূর্বের লেখাটির মতো এই বলে নাক সিটকাতে পারবে নাÑ এটাতো মৌলভি লেখা। ছাপাবার কোনো দরকার নেই।

Popular posts from this blog

মার্চ ২০১৪

বিশ্বসেরা আদর্শ বালক মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ নিত্য দিনরাতের হয় আনাগোনা। বনের সুরভি ফুলে মুখরিত হয় চিত্ত আল্পনা। আঁধার লুকোয় , আলোর আগমন ঘটে। ফুল ফোটে। নদী উদ্বেলিত হয় প্রবহমান স্রোতে ; হৃদয় আকৃষ্ট হয় তার মনোমুগ্ধকর কলকল প্রতিধ্বনিতে। পাখি গান করে। পর্বত চিরে ঝরনা ঝরে। চিত্রক প্রকৃতির চিত্র আঁকে। কবি রচনা করে কবিতা Ñ এ সবই হলো পৃথিবীর নিয়মিত বিধান। আর এ বিধান থেকেই আমরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে শিখছি। তাইতো অবলীলায় কবির ভাষায় বলতে পারি , ‘ পৃথিবীটা হলো শিক্ষাঙ্গন ’ । শিক্ষার এ ধারায়ই কোনো মহামনীষীর উত্তম আদর্শ অনুসরণ করে মানুষ হতে পারে আদর্শবান , আপন জীবন গড়তে পারে উজ্জ্বলময় এক অতুলনীয় জীবনে , বাল্যে হতে পারে একজন সেরাদশ আদর্শ বালক , আর নৈতিকতায় এক গরিষ্ঠ নৈতিক , কর্মজীবনে পদার্পণ করে হতে পারে সমাজের যোগ্যনেতা এবং শিষ্টাচারে আদর্শ শিষ্টাচারক।

মুফতী আমিনী রহ. স্মরণ সংখ্যা-২০১৩

মুফতি আমিনী- ভাঙা ভাঙা স্বরে সোনা ঝরানো কথা আর শুনবো না! - ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী এক. মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এখন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। বুঝি নি , এতো তাড়াতাড়ি .. এতো অসময়ে .. এতো দুঃসময়ে হঠাৎ করে তিনি চলে যাবেন! সেদিন রাতে এতোটা ‘ ঘুম-কাতুরে ’ না হলেও পারতাম! গভীর রাতে অনেক ফোন এসেছে , ধরতে পারি নি! সময় মতো তাঁর মৃত্যু সংবাদটা জানতে পারি নি! ফজরে উঠে দেখি ; অনেক মিসকল। সাথে একটা ‘ মোবাইলবার্তা ’ Ñ ‘ মুফতি আমিনী আর নেই ’ ! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!! শোক-বিহ্বলতায় আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম! শোকস্তব্ধ এতিমের মতো হাহাকার করতে লাগলো ‘ এতিম ’ মনটা! তাঁকে এভাবে হঠাৎ করে হারানোর শোক অনেক বড় শোক! কেননা , এ শোক প্রিয় উস্তায হারানোর শোক!

ইন্তেকাল

চলে গেলেন নিভৃতচারী আধ্যাত্মিক মনীষী   মুহাদ্দিস আল্লামা   নুরুল ইসলাম জদীদ (রহ.) হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর একে একে আমাদের মুরব্বীগণ বিদায় নিয়ে যাচ্ছেন। গত পাঁচ-ছয় বছরে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন জাতির অকৃত্রিম অভিভাবক ,   জাতীয় খতিব মাওলানা ওবাইদুল হক রহ. ,   খতিব মাওলানা আমিনুল ইসলাম (রহ.) ,   সাবেক এমপি মাওলানা আতাউর রহমান খান ,   মুফতিয়ে আযম মাওলানা আহমদুল হক (রহ.) ,   পীরে কামিল মাওলানা জমির উদ্দিন নানুপুরী (রহ.) ,   কুতুবে যামান মাওলানা মুফতি আজিজুল হক (রহ.) এর সুযোগ্য খলিফা মাওলানা নুরুল ইসলাম (কদিম সাহেব হুজুর) (রহ.) ,   প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আইয়ুব (রহ.) ,   শায়খুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক (রহ.) এর মতো বরেণ্য ওলামা-মশায়েখ।