Skip to main content

মাসিক নবধ্বনি, মে সংখ্যা, ২০১৩

পত্রিকা পর্যালোচনা

মুহাম্মাদ জাকির হোসেন


সাধারণ পত্র-পত্রিকা ও ম্যগাজিনের সাথে পাল্লা দিয়ে ইসলামী ঘরানার মিডিয়ার সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলছে। বাংলাদেশে ইসলামী দৈনিক পত্রিকা এখন পর্যন্ত না থাকলেও সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনের সংখ্যা অনেক। যার যার অবস্থান থেকে সবাই পাঠককে মানসম্মত আয়োজন চেষ্টা থাকলেও সচেতনতা এবং অন্যান্য বিষয়ে একেকটির গ্রহণযোগ্যতা এবং সাড়া একেকরকম। সবদিক দিয়ে ঈর্ষনীয় মাসিক ম্যাগাজিন কোনটি? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়ার সময় এখনও আসেনি। তবে কিছু কিছু ম্যাগাজিনের প্রচেষ্টা এক্ষেত্রে প্রশংসার দাবিদার। চলুন, দেখে নেয়া যাক গতমাসে প্রকাশিত কিছু মাসিক ইসলামী ম্যাগাজিনের হালচাল। এ আয়োজনে আমরা সামগ্রিকভাবে কিছু ম্যাগাজিন সম্পর্কে আলোচনা করার প্রয়াস চালিয়েছি।

সবদিক থেকে বিবেচনা করলে মাসিক আল কাউসার সবার উপরে উঠে আসে। ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া থেকে প্রকাশিত এ মাসিক পত্রিকার সবচেয়ে বড় বৈশষ্ট্য হল এর সবগুলো লেখাই গবেষনা এবং বাস্তবধর্মী। অভিজ্ঞমহলের ধারণা, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এটাই সর্বোচ্চ মানসম্মত গবেষনামূলক ম্যগাজিন। যুগাপোযোগি বিষয় নির্ধারণ এবং ধর্মীয় সূত্রাবলী থেকে সংকলিত অসাধারন কিছু আয়োজন নিয়ে সাজানো হয় এর প্রতিটি সংখ্যা। প্রচলিত ভুল, শিক্ষার্থীদের পাতা আল কাউসারকে মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তবে কখনও কখনও কিছু কাঙ্খিত বিষয় দেরিতে প্রকাশ করা হয়। যেমন এপ্রিলের সংখ্যায় প্রকাশিত ওমর আহমদ (রহঃ) ও গিয়াসুদ্দিন (রহঃ)এর  জীবন নিয়ে আলোচনা মার্চের সংখ্যার জন্য কাম্য ছিল। তাছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে নাস্তিকতা বিষয়ে একটি আয়োজন থাকা উচিত ছিল যা মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক এবং সাধারণ মুসলমানদের জন্য খুব প্রয়োজনীয়।
সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে মাসিক রহমত সবসময় সাহসী এবং দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকে। দীর্ঘদিনের পাঠকনন্দিত এ পত্রিকাটি এখন আর আগের ঈর্ষনীয় অবস্থায় নেই। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা পুরনো পাঠকদের কাছে মাসিক রহমতকে নিয়ে যেতে হলে মুদ্রিত সংস্করণের পাশাপাশি ইন্টারনেট সংস্করণের বিকল্প নেই। রহমতের এপ্রিল সংখ্যায় নাস্তিকতা, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নির্বাচন সম্পাদক মনযুর আহমদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার ফসল। পত্রিকাটি রাজনৈতিক আলোচিত ইস্যুতে সরব থাকায় এতে ইসলামী ইলমী গবেষনামূলক লেখা দেখা যায়না।
প্রকাশিত হওয়ার মাত্র এক বছরের মধ্যে পাঠকদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে মুফতি আব্দুর রহমান (দা.বা) এর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত মাসিক আল-আবরার। যুগাপোযোগী মাসআলা-মাসায়িল এবং ইসলাহী বিষয় নিয়ে পত্রিকাটি আরও ভালোভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলোতে ধারাবাহিক পর্ব আকারে প্রকাশিত লেখার আধিক্য একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আরও সচেতন থাকা উচিত। এ পত্রিকায় সাহিত্য বিষয়ক আয়োজনের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে। পাশাপাশি বর্তমান প্রেক্ষাপটের উপর আলোচনাও আশাহত হওয়ার মতো।
জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া থেকে প্রকাশিত মাসিক রাহমানী পয়গাম দেশ ও সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিষয় নির্ধারণে এগিয়ে আছে। একসময় বয়ান ও নসীহতের প্রাধান্য থাকলেও বর্তমানে তাতে এসবের উপস্থিতি দিনদিন কমে যাচ্ছে। রাজধানী একটি বড় মাদরাসা থেকে প্রকাশিত এ ম্যাগাজিনটি চাইলে ছাত্রদের জন্য আরও অনেক সুন্দর ও আকর্ষণীয় হতে পারে- আমরা আশাবাদী।
বাংলাদেশের বর্তমান আলোচিত ইস্যু হেফাজতে ইসলাম। এর প্রধান কেন্দ্র হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মইনুল ইসলাম। এত বড় সুপ্রাচীন এবং সুবৃহৎ প্রতিষ্ঠানের মুখপত্র হিসেবে মাসিক মুঈনুল ইসলাম এখনও পিছিয়ে আছে। ফেসবুকে মাসিক মুঈনুল ইসলামের একটি পাতা আছে। এর সদস্যসংখ্যা সাড়ে দশ হাজার। অথচ সেখানে পত্রিকাটি নিয়ে কোন আলোচনা কিংবা এ বিষয়ের কোন পোস্ট নেই। নাসিম চৌধুরী নামে একজনের ইচ্ছেমতো পোস্ট নিয়ে চলছে পাতাটি। তাতে হাটহাজারী মাদরাসা কিংবা মাসিক মুঈনুল ইসলামের কোন সরব পদচারণা নেই। আমরা মাসিক মুঈনুল ইসলাম কর্তৃপক্ষের কাছে পত্রিকাটিকে জাতীয় পর্যায়ে আরও মানসম্মত করার পাশাপাশি ফেসবুকে তাদেরকে সক্রিয় হওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
বহুল প্রচারিত এবং সর্বত্র পরিচিত মাসিক আদর্শ নারীর বর্তমান অবস্থা হতাশাজনক। পাঠকদের অভিযোগ, একচেটিয়া লেখা এবং  লেখার মান ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ে পত্রিকাটি এখন আর আগের মতো তৎপর নয়। এ দেশে ইসলামী ম্যাগাজিনগুলোর মধ্যে একমাত্র মাসিক মদীনার নাম দেশের সাধারণ পাঠকরাও জানেন। এর প্রাণপুরুষ এবং বাংলা ইসলামী সাহিত্যের অন্যতম কান্ডারী মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বেশ কয়েক বছর ধরেই বিছানায় শায়িত। তার এ অনুপস্থিতি মাসিক মদীনার ভগ্নদশায় সুস্পষ্ট। মাসিক মদীনার বর্তমান কর্তৃপক্ষ একটু উদ্যোগী হলে ম্যাগাজিনটিকে আবার আগের মতো সরব এবং গ্রহণযোগ্য অবস্থানে নিয়ে যেতে পারেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বেশ কয়েকবছর ধরে প্রকাশিত হয়েও এখনও পাঠকদের কাছে নতুন কোন বার্তা দিতে পারছে না যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক আল জামিয়া। মূলত আত্মসংশোধন বা ইসলাহী ধরণের লেখা ও বিষয়ে এ ম্যাগজিনটির অবস্থান প্রশংসনীয় হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে দিকনির্দেশনামূলক আয়োজনের অনুপস্থিতি পাঠককে হতাশ করে। একটি বড় মাদরাসার মাসিক ম্যাগজিন হিসেবে আল জামিয়ার আরও সচেতন প্রয়াস এবং উদ্যোগী তৎপরতা সময়ের দাবী। পত্রিকার অন্যান্য নিয়মিত আয়োজনের পাশাপাশি সাহিত্যবিষয়ক লেখালেখিতেও দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
এগুলো ছাড়াও বাজারে আরও বেশকিছু ইসলামী মাসিক ম্যাগাজিন রয়েছে। আমাদের পরবর্তী আয়োজনে আমরা সেসব নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। ততদিন পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন।

Popular posts from this blog

মার্চ ২০১৪

বিশ্বসেরা আদর্শ বালক মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ নিত্য দিনরাতের হয় আনাগোনা। বনের সুরভি ফুলে মুখরিত হয় চিত্ত আল্পনা। আঁধার লুকোয় , আলোর আগমন ঘটে। ফুল ফোটে। নদী উদ্বেলিত হয় প্রবহমান স্রোতে ; হৃদয় আকৃষ্ট হয় তার মনোমুগ্ধকর কলকল প্রতিধ্বনিতে। পাখি গান করে। পর্বত চিরে ঝরনা ঝরে। চিত্রক প্রকৃতির চিত্র আঁকে। কবি রচনা করে কবিতা Ñ এ সবই হলো পৃথিবীর নিয়মিত বিধান। আর এ বিধান থেকেই আমরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে শিখছি। তাইতো অবলীলায় কবির ভাষায় বলতে পারি , ‘ পৃথিবীটা হলো শিক্ষাঙ্গন ’ । শিক্ষার এ ধারায়ই কোনো মহামনীষীর উত্তম আদর্শ অনুসরণ করে মানুষ হতে পারে আদর্শবান , আপন জীবন গড়তে পারে উজ্জ্বলময় এক অতুলনীয় জীবনে , বাল্যে হতে পারে একজন সেরাদশ আদর্শ বালক , আর নৈতিকতায় এক গরিষ্ঠ নৈতিক , কর্মজীবনে পদার্পণ করে হতে পারে সমাজের যোগ্যনেতা এবং শিষ্টাচারে আদর্শ শিষ্টাচারক।

মুফতী আমিনী রহ. স্মরণ সংখ্যা-২০১৩

মুফতি আমিনী- ভাঙা ভাঙা স্বরে সোনা ঝরানো কথা আর শুনবো না! - ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী এক. মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এখন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। বুঝি নি , এতো তাড়াতাড়ি .. এতো অসময়ে .. এতো দুঃসময়ে হঠাৎ করে তিনি চলে যাবেন! সেদিন রাতে এতোটা ‘ ঘুম-কাতুরে ’ না হলেও পারতাম! গভীর রাতে অনেক ফোন এসেছে , ধরতে পারি নি! সময় মতো তাঁর মৃত্যু সংবাদটা জানতে পারি নি! ফজরে উঠে দেখি ; অনেক মিসকল। সাথে একটা ‘ মোবাইলবার্তা ’ Ñ ‘ মুফতি আমিনী আর নেই ’ ! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!! শোক-বিহ্বলতায় আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম! শোকস্তব্ধ এতিমের মতো হাহাকার করতে লাগলো ‘ এতিম ’ মনটা! তাঁকে এভাবে হঠাৎ করে হারানোর শোক অনেক বড় শোক! কেননা , এ শোক প্রিয় উস্তায হারানোর শোক!

ইন্তেকাল

চলে গেলেন নিভৃতচারী আধ্যাত্মিক মনীষী   মুহাদ্দিস আল্লামা   নুরুল ইসলাম জদীদ (রহ.) হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর একে একে আমাদের মুরব্বীগণ বিদায় নিয়ে যাচ্ছেন। গত পাঁচ-ছয় বছরে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন জাতির অকৃত্রিম অভিভাবক ,   জাতীয় খতিব মাওলানা ওবাইদুল হক রহ. ,   খতিব মাওলানা আমিনুল ইসলাম (রহ.) ,   সাবেক এমপি মাওলানা আতাউর রহমান খান ,   মুফতিয়ে আযম মাওলানা আহমদুল হক (রহ.) ,   পীরে কামিল মাওলানা জমির উদ্দিন নানুপুরী (রহ.) ,   কুতুবে যামান মাওলানা মুফতি আজিজুল হক (রহ.) এর সুযোগ্য খলিফা মাওলানা নুরুল ইসলাম (কদিম সাহেব হুজুর) (রহ.) ,   প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আইয়ুব (রহ.) ,   শায়খুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক (রহ.) এর মতো বরেণ্য ওলামা-মশায়েখ।