Skip to main content

মাসিক নবধ্বনি, মে সংখ্যা, ২০১৩

শ্রমিকের অধিকারে সোচ্চার ইসলাম

আনছারুল হক ইমরান


১লা মে। বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে শ্রমিক দিবস। শ্রম ও শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কত সেমিনার, শোভাযাত্রা, র‌্যালি অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বময়। শ্রমিক নেতারা মঞ্চে উঠে আজ বজ্র কণ্ঠে অধিকারের কথা বলবেন, তারপর !! এসবে কি শ্রমিকদের প্রাপ্য ও অধিকার আদায়ের নিশ্চয়তা ফিরে আসবে? এ পর্যন্ত কি ফিরে এসেছে কিছু? বিগত কয়েক দশকে হয়নি কিছুই দিবস পালন ছাড়া। এভাবেই মে দিবস পালন শুধুই আনুষ্ঠানিকতায় রয়ে যাবে যতদিন না এ বিষয়টিকে আমরা নিজেদের ধর্মীয় কর্তব্য বলে অনুধাবন করব। 
আজ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ যে ভ্রান্তিতে ডুবে আছে, তা হচ্ছে- ইসলাম নেহায়েত কিছু ইবাদত আর যিকির আযকারের নাম। আমাদের সমাজে কত নিয়মিত মুসল¬ী ও ধর্মপ্রাণ নিজেদের নামায রোযার ইবাদতকে কবুল ভেবে খুশীমনে দিন কাটাচ্ছেন। অথচ তাদের তত্ত্বাবধানে কাজ করা কত শ্রমিক নিজেদের প্রাপ্য পাচ্ছেন না সময় মতো। তারা ভুলে বসে আছেন, আল¬াহর হক হয়তো তিনি মাফ করে দিবেন, কিন্তু মানুষের অধিকার ও হক থেকে বিন্দু পরিমাণও তিনি মাফ করতে পারেন না- যতক্ষণ না ঐ বান্দা তা মাফ করে দেয়। এমনকি শহীদের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হলেও বান্দার কোন অধিকার যদি তার অনাদায় থেকে থাকে- তবে সেটুকু ঝুলে থাকবে তা মাফ না পাওয়া পর্যন্ত।
বুখারী শরীফের এক হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, আল¬াহর রাসূল সা. বলেছেন, আল¬াহ পাক বলেন, কিয়ামতের দিন স্বয়ং আমি তিন প্রকারের লোকের বিপক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করবো, এদের মধ্যে এক প্রকার হচ্ছে ঐ লোক, যে কোন কাজের জন্য শ্রমিক নিয়োগ করে কাজ পূর্ণ হওয়ার পরও শ্রমিকের পুরো প্রাপ্য আদায় করেনি।
অন্য এক হাদীসে তিনি বলেছেন, শ্রমিকের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তার প্রাপ্য আদায় করে দাও। পবিত্র কুরআনের আয়াতে আল¬াহ পাক নির্দেশ দিয়েছেন, হে ঈমানদাররা! তোমাদের চুক্তিসমূহকে তোমরা রক্ষা করে চলো।
ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম কিংবা মতবাদ অথবা কোন মহামানব শ্রমিকের অধিকার ও প্রাপ্য সম্পর্কে এত দৃঢ়ভাবে আওয়াজ তুলেনি বিশ্বময়। ইসলাম যেভাবে শ্রমের জন্য উৎসাহিত করেছে মানুষকে, তেমনিভাবে সতর্ক করেছে সব মহাজনকে তারা যেন শ্রমিকের অধিকার ও প্রাপ্য যথাসময়ে পরিপূর্ণভাবে আদায় করে দেয়।
আমাদের আশেপাশে কত চৌধুরী সাহেব এখানে ওখানে লোকদেখানো দান সদকা করে দানশীল হয়ে সুনাম কুড়াচ্ছেন স্বজনদের কাছে, অথচ তার আলীশান প্রাসাদের গেইটের দারোয়ান কিংবা তার ঘরের কাজের লোকটি যে সামান্য বেতনে দিনরাত সেবা করে যাচ্ছে- তার প্রাপ্য সময়মতো দিতে গড়িমসি করে।
শ্রমিকদের সম্মান ও অধিকার আদায়ে ইসলাম যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, এর সামান্যতম অংশও যদি আজ বাস্তবায়িত হতো, তবে দেখতে হতো না এ মে দিবস, গার্মেন্টস থেকে কাজ ছেড়ে শ্রমিকরা আর ব্যস্ত হতো না সড়ক অবরোধ কিংবা ভাংচুরে। আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াতো না অনাহারী শ্রমিকদের আর্তনাদ। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে তাই আজ প্রয়োজন ইসলামের আলোয় মানসিক শুদ্ধতা, নিছক দিবস কিংবা শে¬াগান নয়।
আহা! সভ্য পৃথিবী, তুমি কি এবার একটু ফিরে তাকাবে চৌদ্দশ বছর আগের সেই সোনালী যুগের দিকে, যেখানে মালিক শ্রমিক আহার করতেন একই থালায় বসে।

Popular posts from this blog

মার্চ ২০১৪

বিশ্বসেরা আদর্শ বালক মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ নিত্য দিনরাতের হয় আনাগোনা। বনের সুরভি ফুলে মুখরিত হয় চিত্ত আল্পনা। আঁধার লুকোয় , আলোর আগমন ঘটে। ফুল ফোটে। নদী উদ্বেলিত হয় প্রবহমান স্রোতে ; হৃদয় আকৃষ্ট হয় তার মনোমুগ্ধকর কলকল প্রতিধ্বনিতে। পাখি গান করে। পর্বত চিরে ঝরনা ঝরে। চিত্রক প্রকৃতির চিত্র আঁকে। কবি রচনা করে কবিতা Ñ এ সবই হলো পৃথিবীর নিয়মিত বিধান। আর এ বিধান থেকেই আমরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে শিখছি। তাইতো অবলীলায় কবির ভাষায় বলতে পারি , ‘ পৃথিবীটা হলো শিক্ষাঙ্গন ’ । শিক্ষার এ ধারায়ই কোনো মহামনীষীর উত্তম আদর্শ অনুসরণ করে মানুষ হতে পারে আদর্শবান , আপন জীবন গড়তে পারে উজ্জ্বলময় এক অতুলনীয় জীবনে , বাল্যে হতে পারে একজন সেরাদশ আদর্শ বালক , আর নৈতিকতায় এক গরিষ্ঠ নৈতিক , কর্মজীবনে পদার্পণ করে হতে পারে সমাজের যোগ্যনেতা এবং শিষ্টাচারে আদর্শ শিষ্টাচারক।

মুফতী আমিনী রহ. স্মরণ সংখ্যা-২০১৩

মুফতি আমিনী- ভাঙা ভাঙা স্বরে সোনা ঝরানো কথা আর শুনবো না! - ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী এক. মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এখন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। বুঝি নি , এতো তাড়াতাড়ি .. এতো অসময়ে .. এতো দুঃসময়ে হঠাৎ করে তিনি চলে যাবেন! সেদিন রাতে এতোটা ‘ ঘুম-কাতুরে ’ না হলেও পারতাম! গভীর রাতে অনেক ফোন এসেছে , ধরতে পারি নি! সময় মতো তাঁর মৃত্যু সংবাদটা জানতে পারি নি! ফজরে উঠে দেখি ; অনেক মিসকল। সাথে একটা ‘ মোবাইলবার্তা ’ Ñ ‘ মুফতি আমিনী আর নেই ’ ! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!! শোক-বিহ্বলতায় আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম! শোকস্তব্ধ এতিমের মতো হাহাকার করতে লাগলো ‘ এতিম ’ মনটা! তাঁকে এভাবে হঠাৎ করে হারানোর শোক অনেক বড় শোক! কেননা , এ শোক প্রিয় উস্তায হারানোর শোক!

মুফতী আমিনী রহ. স্মরণ সংখ্যা-২০১৩

যে বার্তা রেখে গেলেন মুফতী আমিনী উবায়দুর রহমান খান নদভী জীবন যেভাবে যাপন করবে মৃত্যুও তোমাদের সেভাবেই হবে। যেভাবে মৃত্যুবরণ করবে শেষ বিচারের দিন সে অবস্থায়ই উঠবে। জীবন- মৃত্যুর ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে এমন একটা ইশারা রয়েছে। মুফতী মাওলানা ফজলুল হক আমিনী ১১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দিনভর তার স্বাভাবিক কাজকর্ম করেছেন। ইবাদত-বন্দেগী , খাওয়া দাওয়া , শিক্ষকতা ও ইমামতিসহ সংগঠন , রাজনীতি , বৈঠক , বিবৃতিদান সবই করেছেন। রাতের মাগরিবের পর থেকে এশা পর্যন্ত লালবাগের ছাত্রদের বোখারী শরীফ পাঠদান করেছেন। একবার বলেছিলেন শরীর খারাপ লাগছে। ১১টার দিকে বেশি খারাপ লাগায় হাসপাতালে যান। সেখানেই রাত সোয়া বারটার দিকে তার ইন্তেকাল হয়। তারিখটা পড়ে যায় ১২ ডিসেম্বর। বহুল আলোচিত ১২-১২-১২ তারিখ মুফতী আমিনী চলে গেলেন না ফেরার দেশে।