শ্রমিকের
অধিকারে সোচ্চার ইসলাম
আনছারুল হক ইমরান
১লা মে। বিশ্বজুড়ে
পালিত হচ্ছে শ্রমিক দিবস। শ্রম ও শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কত সেমিনার, শোভাযাত্রা, র্যালি অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বময়।
শ্রমিক নেতারা মঞ্চে উঠে আজ বজ্র কণ্ঠে অধিকারের কথা বলবেন, তারপর
!! এসবে কি শ্রমিকদের প্রাপ্য ও অধিকার আদায়ের নিশ্চয়তা ফিরে আসবে? এ পর্যন্ত কি ফিরে এসেছে কিছু? বিগত কয়েক দশকে হয়নি কিছুই
দিবস পালন ছাড়া। এভাবেই মে দিবস পালন শুধুই আনুষ্ঠানিকতায় রয়ে যাবে যতদিন না এ বিষয়টিকে
আমরা নিজেদের ধর্মীয় কর্তব্য বলে অনুধাবন করব।
আজ সমগ্র
মুসলিম উম্মাহ যে ভ্রান্তিতে ডুবে আছে, তা হচ্ছে- ইসলাম নেহায়েত কিছু ইবাদত আর যিকির আযকারের নাম। আমাদের সমাজে কত
নিয়মিত মুসল¬ী ও ধর্মপ্রাণ নিজেদের নামায রোযার ইবাদতকে ‘কবুল’ ভেবে খুশীমনে দিন কাটাচ্ছেন।
অথচ তাদের তত্ত্বাবধানে কাজ করা কত শ্রমিক নিজেদের প্রাপ্য পাচ্ছেন না সময় মতো। তারা
ভুলে বসে আছেন, আল¬াহর হক হয়তো তিনি মাফ
করে দিবেন, কিন্তু মানুষের অধিকার ও হক থেকে বিন্দু পরিমাণও তিনি
মাফ করতে পারেন না- যতক্ষণ না ঐ বান্দা তা মাফ করে দেয়। এমনকি শহীদের সব গুনাহ মাফ
করে দেওয়া হলেও বান্দার কোন অধিকার যদি তার অনাদায় থেকে থাকে- তবে সেটুকু ঝুলে থাকবে
তা মাফ না পাওয়া পর্যন্ত।
বুখারী শরীফের
এক হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, আল¬াহর রাসূল সা. বলেছেন, আল¬াহ পাক বলেন, কিয়ামতের দিন স্বয়ং আমি তিন প্রকারের লোকের
বিপক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করবো, এদের মধ্যে এক প্রকার হচ্ছে ঐ লোক,
যে কোন কাজের জন্য শ্রমিক নিয়োগ করে কাজ পূর্ণ হওয়ার পরও শ্রমিকের পুরো
প্রাপ্য আদায় করেনি।
অন্য এক হাদীসে
তিনি বলেছেন, শ্রমিকের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই
তার প্রাপ্য আদায় করে দাও। পবিত্র কুরআনের আয়াতে আল¬াহ পাক নির্দেশ
দিয়েছেন, হে ঈমানদাররা! তোমাদের চুক্তিসমূহকে তোমরা রক্ষা করে
চলো।
ইসলাম ছাড়া
অন্য কোন ধর্ম কিংবা মতবাদ অথবা কোন মহামানব শ্রমিকের অধিকার ও প্রাপ্য সম্পর্কে এত
দৃঢ়ভাবে আওয়াজ তুলেনি বিশ্বময়। ইসলাম যেভাবে শ্রমের জন্য উৎসাহিত করেছে মানুষকে, তেমনিভাবে সতর্ক করেছে সব মহাজনকে তারা যেন শ্রমিকের অধিকার ও
প্রাপ্য যথাসময়ে পরিপূর্ণভাবে আদায় করে দেয়।
আমাদের আশেপাশে
কত চৌধুরী সাহেব এখানে ওখানে লোকদেখানো দান সদকা করে দানশীল হয়ে সুনাম কুড়াচ্ছেন স্বজনদের
কাছে, অথচ তার আলীশান প্রাসাদের গেইটের দারোয়ান কিংবা
তার ঘরের কাজের লোকটি যে সামান্য বেতনে দিনরাত সেবা করে যাচ্ছে- তার প্রাপ্য সময়মতো
দিতে গড়িমসি করে।
শ্রমিকদের
সম্মান ও অধিকার আদায়ে ইসলাম যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, এর সামান্যতম অংশও যদি আজ বাস্তবায়িত হতো, তবে দেখতে হতো না এ মে দিবস, গার্মেন্টস থেকে কাজ ছেড়ে
শ্রমিকরা আর ব্যস্ত হতো না সড়ক অবরোধ কিংবা ভাংচুরে। আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াতো না অনাহারী
শ্রমিকদের আর্তনাদ। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে তাই আজ প্রয়োজন ইসলামের আলোয় মানসিক শুদ্ধতা,
নিছক দিবস কিংবা শে¬াগান নয়।
আহা! সভ্য
পৃথিবী, তুমি কি এবার একটু ফিরে তাকাবে চৌদ্দশ বছর আগের
সেই সোনালী যুগের দিকে, যেখানে মালিক শ্রমিক আহার করতেন একই থালায়
বসে।