Skip to main content

মাসিক নবধ্বনি, মে সংখ্যা, ২০১৩

জীবন পথের পাথেয়

ইমাম গাজালী (রহ.) এর মজলিস-১

হোছাইন মুহাম্মদ নাঈমুল হক



পঞ্চম শতাব্দীর দুনিয়াজোড়া ইসলামী ব্যক্তিত্ব ইমাম গাজালীর (রহ.) নাম শুনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। মুসলিম মন-মানস পরিবর্তনের অন্যতম এ দিকপাল আ-জীবন লিখে গেছেন হাজার হাজার পৃষ্ঠা। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখায় তার ছিল সরব পদচারণা; তাফসীর থেকে নিয়ে তাসাওফ, ফিক্বাহ্, উসুল, মানতিক এবং দর্শন পর্যন্ত জ্ঞানের এসব কঠিন কঠিন ক্ষেত্রে শুধু তার দক্ষতা-ই ছিল না বরং এর প্রতিটি শাখায় তিনি লিখে গেছেন অমূল্য গ্রন্থাবলী। যুগ যুগ ধরে তার লেখা ও গবেষণা আজও পিপসা মেটাচ্ছে অজস্র অগণিত ইলমপিপাসু ও গবেষকদের।
ইমাম গাজালীর রচিত বইগুলোর মধ্যে কোনটি মাত্র কয়েক পৃষ্ঠায় সমাপ্ত আবার কোনটির কয়েক খন্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। ইমাম গাজালী রহ, এর লেখা তেমনই একটি ছোট পুস্তিকার নাম নাম- ‘‘ছেলে আমার! তোমার জন্যে’’
এটি মূলত একটি উপদেশপত্রা যা তিনি তার এক প্রিয় ছাত্রকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন। আকারে খুবই ছোট হলেও এর প্রতিটি লাইনে আধ্যাত্মিক জগতের নতুন নতুন রহস্যের বর্ণনা এবং জ্ঞানসাগরের মূল্যবান মনি-মুক্তা ছড়িয়ে আছে! নবধ্বনির পাঠকবন্ধুরা প্রায় সবাই বয়সে নবীন-কিশোর এবং তরুণ। ইমাম গাজালীর মতো মহান ব্যক্তিত্বের এ ছোট্ট রচনা থেকে জীবপাথেয় হিসেবে কিছু অমূল্য সবক এবং দিকনির্দেশনা আমরা জেনে নিতে পারি। এসো, আমরা কিছুক্ষণের জন্য নিবেদিত হই ইমাম গাজালীর মজলিসে।
‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, প্রিয় ছেলে আমার! - আল্লাহ্ তায়ালা যেন তার আনুগত্যের পথে তোমার জীবন দীর্ঘজীবী করেন এবং তোমাকে তার প্রিয়জনদের পথে চলার তাওফীক দান করেন। জেনে রাখো, আসলে উপদেশমালা গাঁথা উচিত নবীজী সা. -এর নবুয়াতের পবিত্র খনি থেকে উৎসারিত মূল্যবান বাণী দিয়ে। এ মহা মূল্যবান খনি থেকে উৎসারিত কোন উপদেশ যদি তোমার কাছে পৌঁছে থাকে তবে আমার উপদেশের কোনই প্রয়োজন নেই, আর যদি না পৌঁছে থাকে তাহলে এ দীর্ঘ সময় তুমি অযথা নষ্ট করেছ।ছেলে আমার! শোনো, উম্মতের উদ্দেশে নবীজী সা. এর মূল্যবান উপদেশসমূহের একটি ছিল এই-‘‘অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়া বান্দা থেকে আল্লাহ পাক মুখ ফিরিয়ে নেয়ার আলামত। আর যে ব্যক্তি জীবনের সামান্য একটি মুহূর্তও তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কাজে নষ্ট করল- এতে তার অত্যন্ত ব্যথিত হওয়া উচিত। আর যার বয়স চল্লিশ পেরিয়ে যাওয়ার পরও তার ভাল কাজের পরিমান খারাপ কাজের চেয়ে বেশি হয়নি তবে জাহান্নামের জন্য তার প্রস্তুত হওয়া উচিত’’। আমার মনে হয়, জ্ঞানীদের জন্য এ একটি উপদেশই যথেষ্ট।ছেলে আমার! উপদেশ দেওয়া অনেক সহজ কাজ! তবে তা গ্রহন করাটাই সমস্যা; কারণ, প্রবৃত্তির অনুসারীদের জন্য এ বিষয়টি খুব কষ্টকর। বর্ণনাটা আমি এভাবে দিচ্ছি, সাধারণত মানুষের অন্তরে নিষিদ্ধ বিষয়সমূহের প্রতি আকর্ষণ একটু বেশিই থাকে, বিশেষতঃ  যারা নিজেদের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি এবং দুনিয়া অর্জনের আশায় পড়াশোনা করেছে। তারা মনে করে, শুধুমাত্র পড়াশোনার উপর ভিত্তি করেই তারা আখেরাতে পার হয়ে যেতে পারবে। (আখিরাতের জন্যে প্রস্তুতি হিসেবে) অর্জিত জ্ঞান ও বিদ্যা অনুসারে আমল (কাজ) করার প্রয়োজনীয়তা নেই! আর এ ধরনের কথাবার্তা সাধারণত যুক্তিবাদী-দার্শনিকরা বলে থাকে। হায় আল্লাহ!! তারা কি কখনো লক্ষ করেনি যে, তাদের এত শিক্ষা-দীক্ষা, যেগুলো তারা মেনে চলেনি, এসব তো তাদের বিরুদ্ধে উল্টো প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে আছে! আর নবীজী (স.) এ প্রসঙ্গে কী বলেছেন দেখো, ‘‘কিয়ামত দিবসে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে ঐ জ্ঞানীর, যে তার জ্ঞান অনুসারে আমল করেনি’’...।  

Popular posts from this blog

মার্চ ২০১৪

বিশ্বসেরা আদর্শ বালক মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ নিত্য দিনরাতের হয় আনাগোনা। বনের সুরভি ফুলে মুখরিত হয় চিত্ত আল্পনা। আঁধার লুকোয় , আলোর আগমন ঘটে। ফুল ফোটে। নদী উদ্বেলিত হয় প্রবহমান স্রোতে ; হৃদয় আকৃষ্ট হয় তার মনোমুগ্ধকর কলকল প্রতিধ্বনিতে। পাখি গান করে। পর্বত চিরে ঝরনা ঝরে। চিত্রক প্রকৃতির চিত্র আঁকে। কবি রচনা করে কবিতা Ñ এ সবই হলো পৃথিবীর নিয়মিত বিধান। আর এ বিধান থেকেই আমরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে শিখছি। তাইতো অবলীলায় কবির ভাষায় বলতে পারি , ‘ পৃথিবীটা হলো শিক্ষাঙ্গন ’ । শিক্ষার এ ধারায়ই কোনো মহামনীষীর উত্তম আদর্শ অনুসরণ করে মানুষ হতে পারে আদর্শবান , আপন জীবন গড়তে পারে উজ্জ্বলময় এক অতুলনীয় জীবনে , বাল্যে হতে পারে একজন সেরাদশ আদর্শ বালক , আর নৈতিকতায় এক গরিষ্ঠ নৈতিক , কর্মজীবনে পদার্পণ করে হতে পারে সমাজের যোগ্যনেতা এবং শিষ্টাচারে আদর্শ শিষ্টাচারক।

মুফতী আমিনী রহ. স্মরণ সংখ্যা-২০১৩

যে বার্তা রেখে গেলেন মুফতী আমিনী উবায়দুর রহমান খান নদভী জীবন যেভাবে যাপন করবে মৃত্যুও তোমাদের সেভাবেই হবে। যেভাবে মৃত্যুবরণ করবে শেষ বিচারের দিন সে অবস্থায়ই উঠবে। জীবন- মৃত্যুর ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে এমন একটা ইশারা রয়েছে। মুফতী মাওলানা ফজলুল হক আমিনী ১১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দিনভর তার স্বাভাবিক কাজকর্ম করেছেন। ইবাদত-বন্দেগী , খাওয়া দাওয়া , শিক্ষকতা ও ইমামতিসহ সংগঠন , রাজনীতি , বৈঠক , বিবৃতিদান সবই করেছেন। রাতের মাগরিবের পর থেকে এশা পর্যন্ত লালবাগের ছাত্রদের বোখারী শরীফ পাঠদান করেছেন। একবার বলেছিলেন শরীর খারাপ লাগছে। ১১টার দিকে বেশি খারাপ লাগায় হাসপাতালে যান। সেখানেই রাত সোয়া বারটার দিকে তার ইন্তেকাল হয়। তারিখটা পড়ে যায় ১২ ডিসেম্বর। বহুল আলোচিত ১২-১২-১২ তারিখ মুফতী আমিনী চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

মুফতী আমিনী রহ. স্মরণ সংখ্যা-২০১৩

মুফতি আমিনী- ভাঙা ভাঙা স্বরে সোনা ঝরানো কথা আর শুনবো না! - ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী এক. মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এখন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। বুঝি নি , এতো তাড়াতাড়ি .. এতো অসময়ে .. এতো দুঃসময়ে হঠাৎ করে তিনি চলে যাবেন! সেদিন রাতে এতোটা ‘ ঘুম-কাতুরে ’ না হলেও পারতাম! গভীর রাতে অনেক ফোন এসেছে , ধরতে পারি নি! সময় মতো তাঁর মৃত্যু সংবাদটা জানতে পারি নি! ফজরে উঠে দেখি ; অনেক মিসকল। সাথে একটা ‘ মোবাইলবার্তা ’ Ñ ‘ মুফতি আমিনী আর নেই ’ ! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!! শোক-বিহ্বলতায় আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম! শোকস্তব্ধ এতিমের মতো হাহাকার করতে লাগলো ‘ এতিম ’ মনটা! তাঁকে এভাবে হঠাৎ করে হারানোর শোক অনেক বড় শোক! কেননা , এ শোক প্রিয় উস্তায হারানোর শোক!