Skip to main content

মাসিক নবধ্বনি, মে সংখ্যা, ২০১৩


আলোকিত তরুণের আলোয় কিছুক্ষণ

সাময়িক নাম-যশের দিকে না তাকিয়ে নিরব সাধনা চালিয়ে গেলে সুযোগ এসে ধরা দেবে- 

আলী হাসান তৈয়ব

বর্তমান সময়ে যে কজন সম্ভাবনাময় তরুণ নিজের স্বকীয়তা এবং স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে নিবিষ্টমনে লেখালেখি করে চলেছেন- তাদের মধ্যে অন্যতম একজন আলী হাসান তৈয়ব। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের জাতীয় দৈনিকগুলো থেকে নিয়ে গ্রাম-মফস্বলের ছোট কাগজেও তার উজ্জল বিচরণ পাঠককে মোহিত করে রেখেছে। ১৯৮২ সালের ৩১ ডিসেম্বর বগুড়ায় জন্মগ্রহণকারী এ প্রতিভাবান তরুণের বাবার নাম তৈয়ব আলী পাইকার। তার মায়ের নাম আলেয়া বেগম।
২০০৫ সালে বেফাকুল মাদারিস থেকে তাকমীল বিভাগে ১ম বিভাগ প্রাপ্ত আলী হাসান তৈয়ব তার সর্বশেষ পড়াশোনা করেছেন মাদরাসা দারুর রাশাদে সাহিত্য ও সাংবাদিকতা বিষয়ে।
ছোটবেলা থেকেই মাদরাসার গন্ডি পেরিয়ে তিনি জানান দিয়েছিলেন নিজের সম্ভাবনা ও প্রতিভার কথা। নাহবেমীর পড়ার সময় কৈশোর বয়সেই বগুড়ার স্থানীয় দৈনিক সাতমাথায় তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। কৈশোরে খুব বড় মাপের একজন মুফতি হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও ভাগ্যের বাহন তাকে নিয়ে এসেছে আজকের জায়গায়। দিনরাত বিরামহীন তিনি লিখে চলেছেন। বাংলা সাহিত্যের ইসলামী ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার অবিরাম সাধনা আজ অনেকের কাছে ঈর্ষণীয়।

লেখালেখির জন্য আদর্শ কিংবা প্রেরনা হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন বিশ্বখ্যাত কলমসম্রাট সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ., শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. এবং মাওলানা মুহিউদ্দিন খানকে। লেখালেখির সব ধারায় বিচরণে আগ্রহী আলী হাসান তৈয়ব লেখালেখিকে বেছে নিয়েছেন দাওয়াতের অন্যতম সেরা মাধ্যম বলে। নবধ্বনির সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি জানিয়েছেন, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও অনুবাদকেই তিনি তার নিজের বিচরণক্ষেত্র বলে মনে করেন। নিজেকে নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী এমন প্রশ্নের উত্তরে তার সরল জবাব, স্বপ্নগুলো ডানা মেলার আগ পর্যন্ত নিজের কাছেই গোপন থাক।লেখালেখির জন্য তিনি একবার তার একজন মহান শিক্ষকের বিরাগভাজন হয়ে পরবর্তীতে তাঁর কাছ থেকেই লেখার জন্য অনেক আদর এবং দুআ পেয়েছিলেন- লেখালেখির সাথে জড়িত এটাই তার স্মরণীয় ঘটনা। জীবনের অবসরে তিনি কুরআন শরীফ ছাড়া অন্য কোনো বই-ই বারবার পড়ার তাগিদ বোধ করেননি। তার মতে, একজন লেখকের প্রধান কাজ প্রচুর পড়াশোনা করা এবং অন্যদের লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়া।

আলী হাসান তৈয়বকে অনেকের লেখাই মুগ্ধ করেছে। তবে এক সময় দৈনিক ইনকিলাবের মোবায়েদুর রহমানের কলামের জন্য অপেক্ষায় থাকতেন তিনি। আর বর্তমান সময়ে কিছুটা ফরহাদ মজহার এবং মজলুম সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের লেখার অপেক্ষায় থাকি- জানালেন নবধ্বনিকে।
তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল বর্তমান সময়ের তরুণদের মধ্যে কোন তিনজনের লেখা আপনার ভালো লাগে? উত্তরে তার কৌশলী মন্তব্য- অনেকের লেখাই ভালো লাগে। তিনজনকে উৎসাহ দিতে গিয়ে বাকিদের নিরুৎসাহিত করব না। লেখালেখি অঙ্গনে অন্য সমবয়সী তরুণ বন্ধুদের জন্য তার আন্তরিক পরামর্শ হল- সাময়িক নাম-যশের দিকে না তাকিয়ে নিরব সাধনা চালিয়ে গেলে সুযোগ এসে ধরা দেবে। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক আলী হাসান তৈয়বকে আকর্ষণ করে মাধবকুন্ডের জলপ্রপাত। সাদা ও সবুজ তার প্রিয় রং। প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে নির্দ্বিধায় বেছে নিয়েছেন শ্রেষ্ঠতম মানব মুহাম্মাদ সা.কে। প্রিয় মানুষ হিসেবে সবার চেয়ে ভালোবাসেন তার মাকে। কবিতার জগতে তার প্রিয় কবি আলমাহমুদ। প্রতিদিন অজস্র দৈনিক সংবাদপত্রের ভীড়ে কোনো দৈনিকই তার কাছে প্রিয় নয়। তার ভাষায়, সবগুলোই সময় মতো মালিকপক্ষের দালালি করে। মন্দের ভালো হিসেবে একটি ডান এবং একটি বাম দৈনিক রোজ পড়ি। বর্তমানে নিরঙ্কুশ প্রিয় কোনো মাসিক পত্রিকা নেই। ব্যস্ত জীবনের অবসরে বই পড়তে ভালো লাগে এবং কখনো কখনো গুনগুনিয়ে নিজে গেয়ে যান আনমনে।
নিজের অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধের ভীড়ে কিছু কিছু লেখা তাকে অনেক অজস্র পাঠকের ভালোবাসা এনে দিয়েছে- এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অহেতুক মিছে কথা [প্রবন্ধ, সমকাল], রকমারি রাজা, [ছড়া ইনকিলাব], আমার ভেতর গরম বাইর নরম বাবা, [গদ্য, নকীব]।
এই সময়ে ইসলামী লেখকদের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে তার বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর প্রচুর পড়া এবং নিজের অধিকার ও দায়িত্ব স¤পর্কে সজাগ থাকা। পাশাপাশি পেশাদারিত্বের অভাবকে তিনি বর্তমান ইসলামী ম্যগাজিন এবং লেখালেখির প্রধান দূর্বলতা বলে মনে করেন। সাক্ষাতকারের শেষাংশে তিনি তার অভিজ্ঞাতার আলোয় নবধ্বনির জন্য কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। তরুণদের লেখার পাশাপাশি প্রতি সংখ্যায় সিনিয়র জনপ্রিয় লেখকদের অন্তত একটি লেখা ছাপা এবং যে কোনো মূল্যে প্রকাশনা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে নবধ্বনিকে আহবান জানিয়েছেন সময়ের অন্যতম মেধাবী লেখক আলী হাসান তৈয়ব।

Popular posts from this blog

মার্চ ২০১৪

বিশ্বসেরা আদর্শ বালক মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ নিত্য দিনরাতের হয় আনাগোনা। বনের সুরভি ফুলে মুখরিত হয় চিত্ত আল্পনা। আঁধার লুকোয় , আলোর আগমন ঘটে। ফুল ফোটে। নদী উদ্বেলিত হয় প্রবহমান স্রোতে ; হৃদয় আকৃষ্ট হয় তার মনোমুগ্ধকর কলকল প্রতিধ্বনিতে। পাখি গান করে। পর্বত চিরে ঝরনা ঝরে। চিত্রক প্রকৃতির চিত্র আঁকে। কবি রচনা করে কবিতা Ñ এ সবই হলো পৃথিবীর নিয়মিত বিধান। আর এ বিধান থেকেই আমরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে শিখছি। তাইতো অবলীলায় কবির ভাষায় বলতে পারি , ‘ পৃথিবীটা হলো শিক্ষাঙ্গন ’ । শিক্ষার এ ধারায়ই কোনো মহামনীষীর উত্তম আদর্শ অনুসরণ করে মানুষ হতে পারে আদর্শবান , আপন জীবন গড়তে পারে উজ্জ্বলময় এক অতুলনীয় জীবনে , বাল্যে হতে পারে একজন সেরাদশ আদর্শ বালক , আর নৈতিকতায় এক গরিষ্ঠ নৈতিক , কর্মজীবনে পদার্পণ করে হতে পারে সমাজের যোগ্যনেতা এবং শিষ্টাচারে আদর্শ শিষ্টাচারক।

মুফতী আমিনী রহ. স্মরণ সংখ্যা-২০১৩

মুফতি আমিনী- ভাঙা ভাঙা স্বরে সোনা ঝরানো কথা আর শুনবো না! - ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী এক. মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এখন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। বুঝি নি , এতো তাড়াতাড়ি .. এতো অসময়ে .. এতো দুঃসময়ে হঠাৎ করে তিনি চলে যাবেন! সেদিন রাতে এতোটা ‘ ঘুম-কাতুরে ’ না হলেও পারতাম! গভীর রাতে অনেক ফোন এসেছে , ধরতে পারি নি! সময় মতো তাঁর মৃত্যু সংবাদটা জানতে পারি নি! ফজরে উঠে দেখি ; অনেক মিসকল। সাথে একটা ‘ মোবাইলবার্তা ’ Ñ ‘ মুফতি আমিনী আর নেই ’ ! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!! শোক-বিহ্বলতায় আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম! শোকস্তব্ধ এতিমের মতো হাহাকার করতে লাগলো ‘ এতিম ’ মনটা! তাঁকে এভাবে হঠাৎ করে হারানোর শোক অনেক বড় শোক! কেননা , এ শোক প্রিয় উস্তায হারানোর শোক!

ইন্তেকাল

চলে গেলেন নিভৃতচারী আধ্যাত্মিক মনীষী   মুহাদ্দিস আল্লামা   নুরুল ইসলাম জদীদ (রহ.) হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর একে একে আমাদের মুরব্বীগণ বিদায় নিয়ে যাচ্ছেন। গত পাঁচ-ছয় বছরে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন জাতির অকৃত্রিম অভিভাবক ,   জাতীয় খতিব মাওলানা ওবাইদুল হক রহ. ,   খতিব মাওলানা আমিনুল ইসলাম (রহ.) ,   সাবেক এমপি মাওলানা আতাউর রহমান খান ,   মুফতিয়ে আযম মাওলানা আহমদুল হক (রহ.) ,   পীরে কামিল মাওলানা জমির উদ্দিন নানুপুরী (রহ.) ,   কুতুবে যামান মাওলানা মুফতি আজিজুল হক (রহ.) এর সুযোগ্য খলিফা মাওলানা নুরুল ইসলাম (কদিম সাহেব হুজুর) (রহ.) ,   প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আইয়ুব (রহ.) ,   শায়খুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক (রহ.) এর মতো বরেণ্য ওলামা-মশায়েখ।