Skip to main content

রংধনু

লেখক হতে চাও?

লেখালেখির জন্য প্রথম শর্ত কোনটিকোনটিই নয়। এমন কোন শর্ত নেই- যা অর্জিত হলেই একজন মানুষ লেখক হয়ে যাবেন। এমন কোন ট্যাবলেট নেই- যা গিলে ফেললেই লেখা চালু হয়ে যাবে। নেই কোন কোর্স- যা সমাপ্ত করার পর আপনি লেখক হতে পারেন।
চারিদিকে সবকিছুতেই অস্থিরতা। অল্পসময়ে আমরা আজ ধনী হতে চাইশর্টকাট করে অনেক কিছুই পেতে চাই। এমন তাড়াহুড়োর ব্যাপারটি চলে এসেছে লেখালেখিতেও। দিনদিন আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি। লেখক হওয়ার জন্য অস্থির বন্ধুদের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। প্রিয় পাঠকবন্ধুমনে রেখোলেখক হওয়া কঠিন নয়আবার হাতের মোয়াও নয়। খুব অল্প কথায় বলতে গেলে- প্রচুর পড়াশোনাপ্রতিদিনের চর্চাঅসীম ধৈর্য এবং সচেতন মানসিকতা- একজন লেখকের জন্য প্রাথমিক শর্ত অবশ্যই এর কম নয়।
অহরহ আমরা যে ভুলটি করিতা হচ্ছে কাগজ কলম হাতে নিয়ে গুরুগম্ভীর শব্দ খুঁজে খুঁজে লেখা শুরু করি। দেখা যায়এভাবে চার-পাঁচ লাইন লেখার পর আমাদের শব্দভান্ডার ফুরিয়ে আসে। ততক্ষণে আমরাও ক্লান্ত হয়ে যাই। লেখালেখিতে হতাশার সূচনা সেখান থেকেই।
আরেকটি কথা মনে রেখোতুমি যে কয়েক লাইন লিখবে- লেখার পুরো সময়টায় কাগজের সাথে তোমার কথোপকথন চলবে। ঐ কথা বলাবলির সময় তুমি অকৃত্রিম ও সরল থাকতে চেষ্টা করো। খুব কঠিন শব্দ খুঁজতে না গিয়ে তুমি তোমার ভেতরের অবচেতন মনে যে ভাব ও বাক্য তৈরী হচ্ছে- তাতেই তোমার আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করো। লেখার সাথে তুমিও একাত্ম হয়ে মিশে যাও। পাশাপাশি বসে গল্প করার সময় আমাদের যে বন্ধুটি চাপাবাজি করে- তার সাথে কিন্তু আমাদের আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ঠিক তেমনই- নিজের ভেতরে নেইযা তুমি বিশ্বাস করছো নাসেসব নিয়ে অযথা বাহাদুরী দেখানোর কোন মানে নেই। নিজের সাথে একাত্ম হওয়ার প্রথম শর্ত হল প্রতিদিন কিছু কিছু চর্চা অব্যাহত রাখা। হোক তা আজ সারাদিনের দিনলিপি নিয়ে।
তুমি হয়তো অবাক হবেতবুও জেনে রেখোতোমার লেখাটি পাঠকের ভালো লাগা কিংবা মন্দ লাগার বিষয়টি মোটেও তোমার লেখালেখির সাথে সম্পর্কিত নয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শুধু নয়বড় বড় লেখকদের আত্মজীবনী পড়লে দেখবেতারা সবাই স্বীকার করেছেনদীর্ঘ কষ্ট ও শ্রমের বিনিময়ে তৈরী হওয়া অনেক লেখা পাঠক মোটেও গ্রহণ করেনিআবার সাধারণ ভাবে লেখা একটি রচনা মানুষের মনে গভীর ভাবে দাগ কেটেছে। জগতের সবকিছু তো বটেইএ বিষয়টিও উপর থেকেই নিয়ন্ত্রিত। কাজেই পাঠককে নিয়ে তোমার চিন্তা-ভাবনার দরকার নেই। নিজের জন্য লেখালেখি করো- এতেই তোমার সাফল্য।
আমাদের চারপাশে যারা লেখালেখি করছেন- গভীর ভাবে পড়ে দেখো- তাদের অনেকের লেখাই হয়তো মানসম্পন্নকিন্তু পাঠক তা থেকে নতুন কিছু শিখতে পারছেনা। একই বিষয় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানা ভঙ্গিমায় লেখা হচ্ছে। এর মূল কারণ- আমরা যারা লেখক হতে চাই- আমরা পড়তে রাজী নই। বিষয়ের গভীরে ডুব দিয়ে নতুন নতুন জ্ঞান আহরণে আমাদের আগ্রহ নেই। এখানেই আমাদের ধৈর্যের অভাব। ছড়ার লাইন মিলিয়ে আমরা তখন নিজেকে কবি ভেবে আনন্দিত হই।
আর সচেতনতা! এর উদ্দেশ্য হলোবানান বিশুদ্ধতা ও অপ্রয়োজনীয় বিদেশী শব্দের ব্যাপারে সতর্কতা এবং সেইসাথে সাধু ও চলিত রীতির সংমিশ্রণ থেকে লেখাকে পাক-পবিত্র রাখতে হবে। শব্দের সুন্দর গাঁথুনিতে বাক্যের গঠন এবং তাতে শৈল্পিকভাবে রসবোধ ছড়িয়ে দেয়ায় যার যতবেশি দক্ষতা- লেখক হিসেবে সেখানেই তার বেশি সফলতা। আজ এ পর্যন্তই। ভালো থেকো তোমরা সবাই।

Popular posts from this blog

মার্চ ২০১৪

বিশ্বসেরা আদর্শ বালক মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ নিত্য দিনরাতের হয় আনাগোনা। বনের সুরভি ফুলে মুখরিত হয় চিত্ত আল্পনা। আঁধার লুকোয় , আলোর আগমন ঘটে। ফুল ফোটে। নদী উদ্বেলিত হয় প্রবহমান স্রোতে ; হৃদয় আকৃষ্ট হয় তার মনোমুগ্ধকর কলকল প্রতিধ্বনিতে। পাখি গান করে। পর্বত চিরে ঝরনা ঝরে। চিত্রক প্রকৃতির চিত্র আঁকে। কবি রচনা করে কবিতা Ñ এ সবই হলো পৃথিবীর নিয়মিত বিধান। আর এ বিধান থেকেই আমরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে শিখছি। তাইতো অবলীলায় কবির ভাষায় বলতে পারি , ‘ পৃথিবীটা হলো শিক্ষাঙ্গন ’ । শিক্ষার এ ধারায়ই কোনো মহামনীষীর উত্তম আদর্শ অনুসরণ করে মানুষ হতে পারে আদর্শবান , আপন জীবন গড়তে পারে উজ্জ্বলময় এক অতুলনীয় জীবনে , বাল্যে হতে পারে একজন সেরাদশ আদর্শ বালক , আর নৈতিকতায় এক গরিষ্ঠ নৈতিক , কর্মজীবনে পদার্পণ করে হতে পারে সমাজের যোগ্যনেতা এবং শিষ্টাচারে আদর্শ শিষ্টাচারক।

মুফতী আমিনী রহ. স্মরণ সংখ্যা-২০১৩

মুফতি আমিনী- ভাঙা ভাঙা স্বরে সোনা ঝরানো কথা আর শুনবো না! - ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী এক. মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এখন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। বুঝি নি , এতো তাড়াতাড়ি .. এতো অসময়ে .. এতো দুঃসময়ে হঠাৎ করে তিনি চলে যাবেন! সেদিন রাতে এতোটা ‘ ঘুম-কাতুরে ’ না হলেও পারতাম! গভীর রাতে অনেক ফোন এসেছে , ধরতে পারি নি! সময় মতো তাঁর মৃত্যু সংবাদটা জানতে পারি নি! ফজরে উঠে দেখি ; অনেক মিসকল। সাথে একটা ‘ মোবাইলবার্তা ’ Ñ ‘ মুফতি আমিনী আর নেই ’ ! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!! শোক-বিহ্বলতায় আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম! শোকস্তব্ধ এতিমের মতো হাহাকার করতে লাগলো ‘ এতিম ’ মনটা! তাঁকে এভাবে হঠাৎ করে হারানোর শোক অনেক বড় শোক! কেননা , এ শোক প্রিয় উস্তায হারানোর শোক!

মুফতী আমিনী রহ. স্মরণ সংখ্যা-২০১৩

যে বার্তা রেখে গেলেন মুফতী আমিনী উবায়দুর রহমান খান নদভী জীবন যেভাবে যাপন করবে মৃত্যুও তোমাদের সেভাবেই হবে। যেভাবে মৃত্যুবরণ করবে শেষ বিচারের দিন সে অবস্থায়ই উঠবে। জীবন- মৃত্যুর ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে এমন একটা ইশারা রয়েছে। মুফতী মাওলানা ফজলুল হক আমিনী ১১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দিনভর তার স্বাভাবিক কাজকর্ম করেছেন। ইবাদত-বন্দেগী , খাওয়া দাওয়া , শিক্ষকতা ও ইমামতিসহ সংগঠন , রাজনীতি , বৈঠক , বিবৃতিদান সবই করেছেন। রাতের মাগরিবের পর থেকে এশা পর্যন্ত লালবাগের ছাত্রদের বোখারী শরীফ পাঠদান করেছেন। একবার বলেছিলেন শরীর খারাপ লাগছে। ১১টার দিকে বেশি খারাপ লাগায় হাসপাতালে যান। সেখানেই রাত সোয়া বারটার দিকে তার ইন্তেকাল হয়। তারিখটা পড়ে যায় ১২ ডিসেম্বর। বহুল আলোচিত ১২-১২-১২ তারিখ মুফতী আমিনী চলে গেলেন না ফেরার দেশে।