Skip to main content

রংধনু


রাসূলের বিরহবেদনায় বিষণœ বিলাল

ইফরিত আদনান

তার নাম বিলাল। গায়ের রং কালো। হাবশা থেকে গোলাম হিসেবে এসেছিলেন মক্কায়। তারপর কত ঘটনা। রাসূলের হাত ধরে তিনি এসেছিলেন এ মদীনায়। সেই মানুষটি আজ আর নেই। প্রিয়তম রবের ডাকে তিনি চলে গেলেন। বিলাল একা হয়ে গেলেন।
গত কদিন ধরে তার মন ভালো নেই। তিনি অনবরত কাঁদছেন। তার বারবার মনে পড়ছে নবী মুহাম্মাদ সা. এর কথা। তার শূন্যতায় মদীনা যেন আজ প্রাণহীন নগরী। কেমন নিঝুম নিরব হয়ে আছে মদীনার আকাশ বাতাস। কোথাও চাঞ্চল্য নেই। বিলালের আবেগ ও ভালোবাসার রাজ্যে প্রতিটি ইঞ্চি ইঞ্চিতে কেবলই যে এ মানুষটির নাম। কত মধুমাখা স্মৃতি তার জড়িয়ে আছে রাসূলকে ঘিরে।

যতদিন রাসূল বেঁচেছিলেনতিনিই তো ছিলেন তার মুআজ্জিন। রাসূল তাকে খুব বেশী ভালোবাসতেন। সুদূর হাবশা দেশের মানুষ। অথচ কি পরম মায়ায় তাকে কাছে কাছে রাখতেন প্রিয়নবী। তিনি ছিলেন মক্কার দাস। সেখান থেকে তাকে কুড়িয়ে এনে সবচেয়ে সম্মানের জায়গায় বসিয়েছেন রাসূল।
এসব ভেবে বুক ভেঙ্গে কান্না আসছে বিলালের। কে তাকে এখন আশ্রয় দিবেনিজের চাদরে ঢেকে রাখবে। তিনি অনেক দূরে কোথাও চলে যাবেনরাসূলছাড়া এ মদীনা তার আর ভালো লাগছে না। রাসূল নেইআর সব আছেএ দৃশ্য তার জন্য বড় কষ্টের।
মদীনার মসজিদে নববী। সবার মন ভরাক্রান্ত। তারা যেন সব হারিয়ে নিঃস্ব। প্রিয়নবীর মৃত্যুর পর থেকে আর শোনা যাচ্ছে না বিলালের আজান। সবকিছু যেন বদলে গেছে। বিলাল তার আজান দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। কে শুনবে তার আজানতার আজান শুনে কে বের হয়ে আসবে ঐ ঘরটি থেকেকেউ না!! এ কষ্ট সহ্য করার না।
এই একটু আগে আবু বকর রা.কে খলীফা নির্বাচন করা হল। সবাই তার হাতে হাত রেখে আনুগত্যের শপথ নেওয়া শেষ করল। আজ থেকে মদীনার খলিফা হযরত আবু বকর। তিনিই আজ থেকে মুসলমানদের নেতা। সবাই তা মেনে নিলেন। কারণ রাসূল সবচেয়ে বেশি ভালবাসতে আবু বকরকে। সবচেয়ে বেশি সম্মান করতেন তাকে। সুদীর্ঘকাল ধরে আবু বকর রা. রাসূলকে আগলে রেখেছেন। সেই শুরু থেকে।
নামাযের সময় হয়েছে। সাহাবারা মসজিদের দিকে যাচ্ছেন। অথচ তখনও আজান হয়নি।
বিলালের মন বিষন্ন ও ভরাক্রান্ত। তার যে কিছুই ভাল লাগছে না। চারিদিকের আমেজ আয়োজন তাকে টানছে না। নতুন খলীফা আবু বকর রা. মসজিদে এসে প্রবেশ করলেন। তার চারপাশ ঘিরে আছেন সাহাবায়ে কেরাম। হযরত আবু বকর এগিয়ে গেলেন বিলালের কাছে। তারপর তাকে ডাকলেন।
-বিলালউঠুনআজান দিন। এখন নামাজের সময়।
-আমাকে মাফ করবেন। প্রিয় রাসূল ছাড়া আমি আর কারো জন্য আজান দিবো না।
-বিলালউঠুনআজান দিয়ে দিন। সময় এখন নামাজের।
নতুন খলীফার আদেশ। বিলাল রা. তো আর অবাধ্য হতে পারেন না। কারণ আবু বকর রা. তো তারই প্রিয়তম রাসূলের সবচেয়ে কাছের মানুষ। তার নিকটতম আত্মীয়।
বিলাল রা. উঠে দাঁড়ালেন। তিনি আজান দেয়া শুরু করলেন। আহা!! আবার শোনা গেল সেই আজান। এ তো রাসূলের যুগের আজান। এ আজান শুনেই তো রাসূল বের হয়ে আসতেন। সাহাবাদের চোখে পানি চলে এল। তারা কাঁদছেন। বিলালের আজান চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। ঘরে ঘরে আবার কান্না শুরু হল। সবার চোখের সামনে ভেসে উঠল রাসূলের স্মৃতিগুলো। এই তো সেই আজান। বিলালের আজান। রাসূলের মুআজ্জিনের আজান। এ আজান তো রাসূল শুনতেন। আজ যে তিনি নেই।
আজান দিচ্ছেন বিলাল। মদীনার পরিবেশ নিরবতায় ছেয়ে গেল। আজানের মাঝপথে এসে যখন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর নাম এলবিলাল হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলেন।
এ নাম তিনি কিভাবে উচ্চারণ করবেন!! এ যে প্রিয়তমের নাম। কে শুনবে তার কন্ঠের এ ডাক!! বিলাল কাঁদতে লাগলেন। তার গলা ক্ষীণ হয়ে আসছে কান্নার প্রবল স্রোতে। কোনরকম তিনি বাক্যগুলো শেষ করলেন আজানের। তাও থামছে না তার কান্না। কে তাকে সান্তনা দিবেসবার যে একই বিষন্নমুখ।
এই শেষ। আর কোনদিন বিলাল আজান দেননি। রাসূল ছাড়া তিনি আর কার জন্য তিনি আজান দিবেনসেই মানুষটি তো নেই। তিনি মদীনা ছেড়ে চলে গেলেন। রাসূলবিহীন এ মদীনা তার আর ভালো লাগছে না।
অনেকদিন পেরিয়ে গেছে। বিলাল মদীনায় নেই। হযরত আবু বকর রা. এর ইন্তেকাল হল। তারপর হযরত উমর খলীফা হলেন। চারিদিকে নতুন যুগের সূচনা হল। শোক দুঃখ ভুলে মুসলমানরা ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। প্রতিদিন বিজয় আসছে। প্রতিটি সূর্যোদয় তাদের জন্য নতুন নতুন আনন্দ সংবাদ বয়ে আনছে।
মদীনার ছোট্ট দেশটি এখন অনেক বড়। ইসলামী সাম্রাজ্যের সীমান্ত বেড়েই চলেছে। বাইতুল মুকাদ্দাসও তারা জয় করে নিলেন। ফিলিস্তীন এখন মুসলমানদের হাতে। এ সংবাদে সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মসজিদুল আকসায় এলেন হযরত উমর। এমন জয়ের সংবাদে ছুটে এলেন বিলাল রা.। তিনিও আনন্দিত। এ মসজিদেও যে রাসূলের স্মৃতি। তিনি তো এখান থেকেই মিরাজে গিয়েছিলেন।
নামাজের সময় হয়ে এল। মসজিদুল আকসায় আজ থেকে আজান দেয়া হবে। কে দিবে সেই আজানবিলাল। বিলাল রা. সব আবেগ ঢেলে আজান দিলেন। আবারও সেই সুর। মদীনার সুর। রাসূলের ভালোবাসার সুর। সমবেত সাহাবারা ডুকরে কেঁদে উঠলেন। হাউমাউ করে কাঁদছেন সবাই। তাদের মনে পড়ে গেল সেই দিনগুলোর কথা। রাসূলের জীবন্ত হাঁটাচলার স্মৃতিগুলো।

Popular posts from this blog

মার্চ ২০১৪

বিশ্বসেরা আদর্শ বালক মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ নিত্য দিনরাতের হয় আনাগোনা। বনের সুরভি ফুলে মুখরিত হয় চিত্ত আল্পনা। আঁধার লুকোয় , আলোর আগমন ঘটে। ফুল ফোটে। নদী উদ্বেলিত হয় প্রবহমান স্রোতে ; হৃদয় আকৃষ্ট হয় তার মনোমুগ্ধকর কলকল প্রতিধ্বনিতে। পাখি গান করে। পর্বত চিরে ঝরনা ঝরে। চিত্রক প্রকৃতির চিত্র আঁকে। কবি রচনা করে কবিতা Ñ এ সবই হলো পৃথিবীর নিয়মিত বিধান। আর এ বিধান থেকেই আমরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে শিখছি। তাইতো অবলীলায় কবির ভাষায় বলতে পারি , ‘ পৃথিবীটা হলো শিক্ষাঙ্গন ’ । শিক্ষার এ ধারায়ই কোনো মহামনীষীর উত্তম আদর্শ অনুসরণ করে মানুষ হতে পারে আদর্শবান , আপন জীবন গড়তে পারে উজ্জ্বলময় এক অতুলনীয় জীবনে , বাল্যে হতে পারে একজন সেরাদশ আদর্শ বালক , আর নৈতিকতায় এক গরিষ্ঠ নৈতিক , কর্মজীবনে পদার্পণ করে হতে পারে সমাজের যোগ্যনেতা এবং শিষ্টাচারে আদর্শ শিষ্টাচারক।

মুফতী আমিনী রহ. স্মরণ সংখ্যা-২০১৩

মুফতি আমিনী- ভাঙা ভাঙা স্বরে সোনা ঝরানো কথা আর শুনবো না! - ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী এক. মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এখন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। বুঝি নি , এতো তাড়াতাড়ি .. এতো অসময়ে .. এতো দুঃসময়ে হঠাৎ করে তিনি চলে যাবেন! সেদিন রাতে এতোটা ‘ ঘুম-কাতুরে ’ না হলেও পারতাম! গভীর রাতে অনেক ফোন এসেছে , ধরতে পারি নি! সময় মতো তাঁর মৃত্যু সংবাদটা জানতে পারি নি! ফজরে উঠে দেখি ; অনেক মিসকল। সাথে একটা ‘ মোবাইলবার্তা ’ Ñ ‘ মুফতি আমিনী আর নেই ’ ! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!! শোক-বিহ্বলতায় আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম! শোকস্তব্ধ এতিমের মতো হাহাকার করতে লাগলো ‘ এতিম ’ মনটা! তাঁকে এভাবে হঠাৎ করে হারানোর শোক অনেক বড় শোক! কেননা , এ শোক প্রিয় উস্তায হারানোর শোক!

ইন্তেকাল

চলে গেলেন নিভৃতচারী আধ্যাত্মিক মনীষী   মুহাদ্দিস আল্লামা   নুরুল ইসলাম জদীদ (রহ.) হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর একে একে আমাদের মুরব্বীগণ বিদায় নিয়ে যাচ্ছেন। গত পাঁচ-ছয় বছরে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন জাতির অকৃত্রিম অভিভাবক ,   জাতীয় খতিব মাওলানা ওবাইদুল হক রহ. ,   খতিব মাওলানা আমিনুল ইসলাম (রহ.) ,   সাবেক এমপি মাওলানা আতাউর রহমান খান ,   মুফতিয়ে আযম মাওলানা আহমদুল হক (রহ.) ,   পীরে কামিল মাওলানা জমির উদ্দিন নানুপুরী (রহ.) ,   কুতুবে যামান মাওলানা মুফতি আজিজুল হক (রহ.) এর সুযোগ্য খলিফা মাওলানা নুরুল ইসলাম (কদিম সাহেব হুজুর) (রহ.) ,   প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আইয়ুব (রহ.) ,   শায়খুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক (রহ.) এর মতো বরেণ্য ওলামা-মশায়েখ।