Skip to main content

সাক্ষাৎকার

বিশেষ সাক্ষাৎকারে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী

জামায়াতের সহযোগী না বলে বরং আমাকেগুলি করে মেরে ফেলুন


হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের লংমার্চ ঘিরে টানটান উত্তেজনা এখন দেশজুড়ে। এরই মধ্যে সংগঠনটির আমির ও বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফীর এই কর্মসূচির প্রতি সংহতি ও সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টিবিকল্প ধারাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ব্যক্তিদল ও সংগঠন। 
 হেফাজতের বহুল আলোচিত এই ঢাকামুখী লংমার্চ হবে আগামী শনিবার। সংগঠনের নেতারা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এই লংমার্চ বাস্তবায়ন নিয়ে। সব কিছু ছাপিয়ে প্রায় শতবর্ষী দেশবরেণ্য আলেমঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী মাদ্রাসায় মহাপরিচালকের নিজ দপ্তরে বসেই লংমার্চ বাস্তবায়নের সব কার্যক্রম তদারক করছেন আল্লামা শফী। এরই মধ্যে নিয়মমাফিক চার ঘণ্টা পবিত্র বোখারি শরিফ পড়াচ্ছেন তাঁর ছাত্রদের। সার্বিক বিষয়ে তাঁকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীসহ কয়েকজন আলেম। 
গত মঙ্গলবার বিকেলে হাটহাজারী মাদ্রাসায় নিজ কার্যালয়ে কালের কণ্ঠকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

এর মধ্য দিয়ে তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যআন্দোলনের কর্মসূচিএই সংগঠন ঘিরে নানা প্রশ্নদেশজাতি ও ইসলামের পক্ষে এবং নাস্তিক মুরতাদ ব্লগারদের বিরুদ্ধে সংসদে আইন পাসসহ বিভিন্ন দাবিতে লংমার্চসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রথমবারের মতো সরাসরি কোনো মিডিয়ার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। এ সময় তিনি জানানঢাকামুখী লংমার্চে ৫০ লাখ মানুষের জমায়েত ঘটানোর প্রস্তুতি চলছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাধা এলে প্রয়োজনে তিনি শহীদ হতেও রাজি। এই সময়ের মধ্যে সরকার দাবি না মানলে লাগাতার হরতালের কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন বর্ষীয়ান এই আলেম। কালের কণ্ঠ প্রতিবেদকের সঙ্গে আল্লামা শফীর সাক্ষাৎকারের সময় সেখানে উপস্থিত থেকে সহযোগিতা করেছেন মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী।

কালের কণ্ঠ : কোনো বাধার কারণে লংমার্চ বাস্তবায়ন না হলে আপনারা কী করবেন?
আল্লামা শফী : আমরা আগে থেকেই সরকারকে সতর্ক করে আসছিইমান-আকিদা রক্ষায় আমাদের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ লংমার্চ কর্মসূচিতে বাধা দিলে আমরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে লাগাতার হরতাল বা অবস্থান ধর্মঘটের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। আমরা এখনো আশাবাদী৬ এপ্রিলের লংমাচের্র আগেই আমাদের দাবিগুলো পূরণ করে সরকার ওলামা-মাশায়েখ ও ৯০ ভাগ মুসলমানের বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ প্রশমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। আমাদের আশাবাদী হওয়ার কারণ হচ্ছেবর্তমান মহাজোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল তারা কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস করবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার দুইবার বৈঠক হয়েছে। তখনও তিনি এই প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেছিলেন। যদিও সরকার এই প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থাশীল হওয়ার মতো কোনো কাজ এখন পর্যন্ত করেনি।

কালের কণ্ঠ : জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তাদের অর্থেই আপনাদের আন্দোলন চলে- এমন কথাও চাউর আছে। এর সত্যতা কতখানি?
আল্লামা শফী : হেফাজতে ইসলাম হচ্ছে একটি ইসলামী ও ইসলাহী একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এই সংগঠন এ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক বা কোনো দলের পক্ষে-বিপক্ষে যায়এমন কোনো দাবি বা কর্মসূচি দেয়নি। ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাকারী নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহিতার বিরুদ্ধে আমাদের চলমান আন্দোলনেও আমরা যে ১৩টি দাবি উপস্থাপন করেছিএর মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট দাবির অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন না। আমাদের দাবি ও প্রতিবাদ কর্মসূচি একান্তই ইমান-আকিদাইসলাম ও নৈতিকতা সংশ্লিষ্ট। যখন হেফাজতে ইসলামের দাবি আদায়ে সারা দেশ উত্তালতখন ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগার ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা তাদের অন্যায় অবস্থানের পক্ষে কোনো যুক্তি খুঁজে না পেয়ে হেফাজতে ইসলাম ও আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও জঙ্গিবাদের কল্পনাটক সাজিয়ে বিষোদ্গারমূলক বক্তব্য রাখছে। অথচ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও দেশি-বিদেশি পরিদর্শনকারীসহ দেশের কোটি কোটি তওহিদী জনতা দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং হেফাজতে ইসলামের রাজনীতিমুক্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও দাবি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রায় প্রতিদিনই আমাদের সঙ্গে দেখা করছেন। তাঁরা আমাদের পড়ালেখার পরিবেশশৃঙ্খলা এবং হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তাঁরা সকলেই আমাদের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ নীতির ব্যাপারে প্রশংসা করছেন। সুতরাং বিষয়টি এভাবে ভাবুনযারা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) অবাধ্য হয়ে বিষোদ্গার করতে পারছেতারা তাদের অপতৎপরতার প্রতিবন্ধক প্রতিবাদী ওলামা-মাশায়েখ ও হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। আমি মনে করিতাদের অপতৎপরতা ঢাকার জন্য যত মিথ্যাচার ও অপপ্রচারই তারা করুকদেশের ইসলামপ্রিয় জনতা এতে মোটেও বিভ্রান্ত হবে না। আমি আপনাদের মাধ্যমে সমালোচনাকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছিতারা প্রমাণ করে দেখাকহেফাজতে ইসলাম ও ওলামা-মাশায়েখের কোন্ কোন্ দাবির সঙ্গে জামায়াত-সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়াটিভি টক শোতে হেফাজতে ইসলামের জামায়াত-সংশ্লিষ্টতার কথা যা বলা হচ্ছেতা সঠিক নয়। জামায়াত থেকে আমরা অর্থ নিচ্ছি বলে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছেতাদের উদ্দেশে বলবটাকা-পয়সা নিলে জামায়াত থেকে কেনোক্ষমতাসীন বা ইসলামবিদ্বেষী মহল থেকেও তো নিতে পারতাম। আজ থেকে দুদিন আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি বিশেষ প্রতিনিধি দলকে বলেছি, 'আপনারা হেফাজতে ইসলামকে জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার বদলে বুকে গুলি করে আমাকে মেরে ফেলুন। এই ভিত্তিহীন অভিযোগ শুনে ধৈর্য ধরে রাখতে পারি না। কষ্টে বুকটা ফেটে যায়। আপনারা নব্য জামায়াতবিরোধীনব্য মওদুদীবিরোধী। এই গোমরাহ গোষ্ঠীর জন্মলগ্ন থেকেই আমরা কওমি চিন্তার আলেমসমাজ তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক করে আসছি। জামায়াত ও মওদুদীর ইসলামবিরোধী সব তথ্য আমাদের মতো করে আর কেউ এত বেশি জানে না। তাই দয়া করে আমাদেরকে জামায়াতের সঙ্গে তুলনা করবেন না। জামায়াত ও মওদুদীর বিভিন্ন প্রকাশনা বন্ধ এবং তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি এই মুহূর্তে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে আমরা করছি না। হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এটি মূলত নাস্তিক মুরতাদ ধর্মদ্রোহী অপশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনে আওয়ামী লীগকেও আহবান করছি। তারাও মুসলমান হিসেবে আমাদের পাশে দাঁড়াবে। বাধা দেওয়ার পরিবর্তে লংমার্চ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে। এটি তাদেরও ইমানি দায়িত্ব। 

কালের কণ্ঠ : গত মঙ্গলবার তিন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আপনাদের দাবিও নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের গ্রেপ্তার করা। এ বিষয়ে আপনাদের প্রতিক্রিয়া কী?
আল্লামা শফী : রাঘব-বোয়ালদের গ্রেপ্তার না করে দু-চারজন চুনোপুঁটি ধরে তামাশা করার কোনো মানে হয় না। এতে বিক্ষুব্ধ নবীপ্রেমিকদের মনের জ্বালা ও আগুন আরো বাড়বে। যাদেরকে আটক করা হয়েছে এরা কারামুক্তমনাসামহোয়্যারইনসহ জঘন্য কোনো ব্লগ সরকার এখনো বন্ধ করেনি। তাদের পরিচালক-মালিকদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। তা ছাড়া চিহ্নিত কোনো নাস্তিককেও সরকার আটক করেনি। আমরা এমন প্রহসনের বদলে সরকারকে বলবসংসদে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আইন পাস করুন। 

কালের কণ্ঠ : সরকার আপনাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে চায় বলে শোনা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে একাধিক মন্ত্রী ও সরকারের প্রভাবশালী প্রতিনিধিও আপনার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। একপর্যায়ে প্রশাসন থেকে শুক্রবার পর্যন্ত আপনাদের আলটিমেটাম দিয়েও নাকি বলা হয়েছে৬ এপ্রিলের বদলে লংমার্চ অন্য কোনো দিন করতে হবে। আপনাদের দাবির সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাম্প্রতিক সময়ে সরকারবিরোধী শক্তির ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধেও হেফাজতে ইসলামের মঞ্চ থেকে দাবি তুলতে হবে। তা না হলে সরকার ৬ এপ্রিল লংমার্চ করতে দেবে না। এ বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী
আল্লামা শফী : আমাদেরকে কোনো আলটিমেটাম বা সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। হেফাজত একটি স্বাধীন সংগঠন। এর কর্মসূচি কি হবে না হবে- তা নির্ধারণ করবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা। এটি সরকার বা বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন বা পুতুল হিসেবে কাজ করে না। আমরা ইমান রক্ষার এই আন্দোলনে কোনো রক্তচক্ষুকে যেমন ভয় করি নাতেমনি দাবি আদায়ের প্রশ্নে আপস করার চিন্তাও আমাদের নেই। 

কালের কণ্ঠ : শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের ইমাম মাওলানা ফরীদউদ্দীন মাসউদ একজন বড় মাপের দেওবন্দি আলেম। আপনি আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর একজন বিশিষ্ট খলিফা। মাসউদ সাহেবও আপনার পীরভাই এবং পীরের সাহেবজাদা মাওলানা আসআদ মাদানির খলিফা। দুজনই সমচিন্তা ও একই তরিকার আলেমপীর। এর পরও আপনাদের দুজনের অবস্থান দুই দিকে। তাঁর সঙ্গে আপনারা অথবা তাঁর পক্ষ থেকে আপনাদের সঙ্গে সংলাপের কোনো উদ্যোগ হয়েছিল কী?
আল্লামা শফী : মাওলানা মাসউদ নষ্ট ভ্রষ্ট সরকারের কেনা দাস আলেম। তাঁর সঙ্গে আমাদের এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। এর কোনো প্রয়োজন আছে বলেও মনে করি না। 

কালের কণ্ঠ : বিশেষ একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিয়োজিত একই সুরের কয়েকটি পত্রিকার সংবাদ ও লেখায় বিশ্বাস করা যায় কি না এবং তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লেখা পড়ে কোনো কর্মসূচি দেওয়া বা পদক্ষেপ নেওয়া সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
আল্লামা শফী : বর্তমান জমানার কোনো পত্রিকা-মিডিয়ার ওপর বিশ্বাস করার সুযোগ নেই। প্রত্যেকেই কোনো না কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। আমাদের নিজস্ব কোনো মিডিয়া না থাকায় বিভিন্ন মিডিয়ায় যতটুকু পক্ষে আসেআলহামদুলিল্লাহ। বিরুদ্ধেও অনেকে লেখেন। প্রত্যেক মিডিয়ার বিষয়ে সব ইসলামপ্রিয় মানুষের সতর্ক থাকা উচিত। 

কালের কণ্ঠ : সরকারের সঙ্গে সমঝোতা না হলে লংমার্চে সরকারি তরফে বাধা আসবে- অতীত ইতিহাস তাই বলে। সেই সঙ্গে জামায়াত-শিবিরও হেফাজতের সমর্থক-কর্মী সেজে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করবে বলে গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন। এ অবস্থায় ঢাকামুখী লংমার্চ শেষ পর্যন্ত ঢাকায় গিয়ে পৌঁছাবে তো?
আল্লামা শফী : শহীদ হতে হলে তাতেও রাজি আছি। প্রিয় নবীর অবমাননা হবেনাস্তিক-মুরতাদদের উল্লাস দেখব- এর চেয়ে শহীদ হয়ে যাওয়া অনেক ভালো। যত বাধা আসুকলংমার্চ ঢাকায় যাবে। যেখানে বাধা আসবেসেখানেই ইমানদার তৌহিদি জনতাকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। 

কালের কণ্ঠ : সব ব্লগারের বিরুদ্ধে আপনাদের এই আন্দোলননাকি নির্দিষ্ট কিছু ব্লগ ও ব্লগারের বিরুদ্ধে?
আল্লামা শফী : আমাদের আন্দোলন ঢালাওভাবে সব ব্লগ বা ব্লগারের বিরুদ্ধে নয়। অনেক আলেম ও ধর্মপ্রাণ ব্লগারও আছেন। আমাদের আন্দোলন কেবল সেসব ব্লগারের বিরুদ্ধেযারা মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার আড়ালে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপ্রিয় নবী রাসুল (সা.)পবিত্র কোরআন ও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে জঘন্য কুৎসা ও অবমাননায় জড়িত। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ছাড়াও দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে এবং সভ্যতা-ভব্যতা ও গণতন্ত্রের কোনো মাপকাঠিতেই এমন কুৎসা ও অবমাননা মেনে নেওয়া যায় না। ওরা ইসলামের এমন জঘন্য অবমাননা করেছেযা পশ্চিমা বিশ্বের কোনো অমুসলিমের মুখেও কখনো শোনা যায়নি। শুরু থেকেই আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিষ্ঠাইসলামবিরোধী নারীনীতি ও ধর্মহীন শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে আসছি। অথচ কয়েক বছর যেতে না যেতেই বর্তমান সরকারের গৃহীত এসব নীতির মারাত্মক কুফল শুরু হয়ে গেছে।

কালের কণ্ঠ : হেফাজতের পক্ষে বিভিন্ন নেতার বক্তব্যে কিছু ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। হেফাজতের মূল দাবি কী?
আল্লামা শফী : আমাদের মূল দাবি হচ্ছেসংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুরক্ষা ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ম-অবমাননার বিরুদ্ধে অবিলম্বে সংসদে কঠোর আইন পাস করা। পাশাপাশি ফেসবুকটুইটারসহ বিভিন্ন ব্লগ ও সাইটে মহান আল্লাহরাসুল (সা.)ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেসব জঘন্য কটূক্তিকর প্রচারণা অব্যাহত রয়েছেসেসব বন্ধ করে বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্লগব্লগার ও পোস্টদাতাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা। পাঠ্য বইয়ের সব ধর্ম-অবমাননাকর মন্তব্য ও উদ্ধৃতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে অবিলম্বে সংশোধনী প্রকাশ করা। সব অনাচারব্যভিচার ও অশ্লীলতা এবং নাটক-সিনেমায় ব্যক্তিজীবনে ধর্মীয় নিদর্শন তথা দাড়ি-টুপিহিজাব ও ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে অবমাননা রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দান। শিক্ষার সব স্তরে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা। সরকার দেশজনগণ ও মুসলমানদের স্বার্থে আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নিলেই চলমান আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। আমরা বারবার বলে আসছিআমরা ক্ষমতার অংশীদার হতে চাই না। 

কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?
আল্লামা শফী : আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানকে পবিত্র কোরআনের আলোকে প্রণয়ন এবং বিদ্যমান সংবিধান থেকে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন ও ধারা বাতিল করতে হবে বলে শুরু থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি। অবশ্যই প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাসী। ধর্মনিরপেক্ষতার মানেই হচ্ছে নাস্তিকতা। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ নাগরিক ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি এবং সংগত কারণেই বাংলাদেশ মুসলিম দেশ। ইসলামী আইনে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি পালন ও নিরাপত্তা বিধানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করিধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে মূলত এই দেশকে ধর্মহীন তথা নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে। এর আলামতই আমরা দেখতে পাচ্ছি।

কালের কণ্ঠ : হেফাজতে ইসলামের শেষ টার্গেট কী
আল্লামা শফী : ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র যখন যেভাবেই দেখা দেবেজানমালের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সেসব মোকাবিলা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। কালের কণ্ঠ : আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে আপনার সখ্য থাকার কথা শোনা যায়। এ বিষয়ে আপনার কী মত?আল্লামা শফী : যদি এমন কিছু শুনে থাকেনসেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। মুসলমান পরিচয়ে লাখো কোটি মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু শুধু আওয়ামী লীগবিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা সমর্থকের পরিচয়ে কারো সঙ্গে আমার সখ্য বা সংশ্লিষ্টতার কথা কেউ বলতে পারবে না। আমার পুরো জীবনটাই কেটেছে কোরআন-হাদিস ও ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রসারইমান-আকিদা রক্ষাশিরক-বিদআত এবং ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিদর্শনে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য প্রায়ই সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাপ্রতিনিধিদল ও বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব এসে থাকেন। অনেকে ব্যক্তিজীবনে সঠিক ইসলামী অনুশাসন পালনে দিকনির্দেশনা লাভ অথবা দোয়া নেওয়ার জন্য আসেন। 

কালের কণ্ঠ : হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন। এর পরও ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় এই সংগঠন বিশেষ কোনো ভূমিকা পালন করতে চায় কি
আল্লামা শফী : হেফাজতে ইসলাম মৌলিক অরাজনৈতিক নীতিমালা তথা ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির বাইরে কোনো রাজনৈতিক ভূমিকায় কখনো জড়াবে না।

পরিশিষ্ট : আল্লামা শাহ আহমদ শফী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ার টিলা গ্রামের কৃতী আলেম। দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় অধ্যাপনা শেষে দেশে ফিরে তিনি চট্টগ্রামের সর্বপ্রাচীন ও বৃহৎ কওমি ঘরানার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসেবে ২৭ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশ-বিদেশে তাঁর কয়েক লাখ ছাত্র ও ভক্ত রয়েছে। দেশজুড়ে আলেম-ওলামাদের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ থাকলেও তুলনামূলক বিশ্লেষণে তিনিই সবচেয়ে বরেণ্য আলেম হিসেবে সমাদৃত। ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। জন্মলগ্ন থেকেই ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ইমানআকিদাঅস্তিত্ব সংরক্ষণের পাশাপাশি ধর্মদ্রোহী অপশক্তির বিরুদ্ধে অরাজনৈতিক এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আন্দোলন চলে আসছে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে কেন্দ্র করে কতিপয় নাস্তিক ব্লগারের বিরুদ্ধে কোরআনহাদিসইসলামআল্লাহ ও নবী-রাসুলদের বিরুদ্ধে জঘন্য কটূক্তি করার অভিযোগ ওঠার পর এর প্রতিবাদে ইমান রক্ষার আন্দোলনের ডাক দেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী

দৈনিক কালের কন্ঠ

Popular posts from this blog

মার্চ ২০১৪

বিশ্বসেরা আদর্শ বালক মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ নিত্য দিনরাতের হয় আনাগোনা। বনের সুরভি ফুলে মুখরিত হয় চিত্ত আল্পনা। আঁধার লুকোয় , আলোর আগমন ঘটে। ফুল ফোটে। নদী উদ্বেলিত হয় প্রবহমান স্রোতে ; হৃদয় আকৃষ্ট হয় তার মনোমুগ্ধকর কলকল প্রতিধ্বনিতে। পাখি গান করে। পর্বত চিরে ঝরনা ঝরে। চিত্রক প্রকৃতির চিত্র আঁকে। কবি রচনা করে কবিতা Ñ এ সবই হলো পৃথিবীর নিয়মিত বিধান। আর এ বিধান থেকেই আমরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে শিখছি। তাইতো অবলীলায় কবির ভাষায় বলতে পারি , ‘ পৃথিবীটা হলো শিক্ষাঙ্গন ’ । শিক্ষার এ ধারায়ই কোনো মহামনীষীর উত্তম আদর্শ অনুসরণ করে মানুষ হতে পারে আদর্শবান , আপন জীবন গড়তে পারে উজ্জ্বলময় এক অতুলনীয় জীবনে , বাল্যে হতে পারে একজন সেরাদশ আদর্শ বালক , আর নৈতিকতায় এক গরিষ্ঠ নৈতিক , কর্মজীবনে পদার্পণ করে হতে পারে সমাজের যোগ্যনেতা এবং শিষ্টাচারে আদর্শ শিষ্টাচারক।

মুফতী আমিনী রহ. স্মরণ সংখ্যা-২০১৩

মুফতি আমিনী- ভাঙা ভাঙা স্বরে সোনা ঝরানো কথা আর শুনবো না! - ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী এক. মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এখন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। বুঝি নি , এতো তাড়াতাড়ি .. এতো অসময়ে .. এতো দুঃসময়ে হঠাৎ করে তিনি চলে যাবেন! সেদিন রাতে এতোটা ‘ ঘুম-কাতুরে ’ না হলেও পারতাম! গভীর রাতে অনেক ফোন এসেছে , ধরতে পারি নি! সময় মতো তাঁর মৃত্যু সংবাদটা জানতে পারি নি! ফজরে উঠে দেখি ; অনেক মিসকল। সাথে একটা ‘ মোবাইলবার্তা ’ Ñ ‘ মুফতি আমিনী আর নেই ’ ! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!! শোক-বিহ্বলতায় আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম! শোকস্তব্ধ এতিমের মতো হাহাকার করতে লাগলো ‘ এতিম ’ মনটা! তাঁকে এভাবে হঠাৎ করে হারানোর শোক অনেক বড় শোক! কেননা , এ শোক প্রিয় উস্তায হারানোর শোক!

ইন্তেকাল

চলে গেলেন নিভৃতচারী আধ্যাত্মিক মনীষী   মুহাদ্দিস আল্লামা   নুরুল ইসলাম জদীদ (রহ.) হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর একে একে আমাদের মুরব্বীগণ বিদায় নিয়ে যাচ্ছেন। গত পাঁচ-ছয় বছরে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন জাতির অকৃত্রিম অভিভাবক ,   জাতীয় খতিব মাওলানা ওবাইদুল হক রহ. ,   খতিব মাওলানা আমিনুল ইসলাম (রহ.) ,   সাবেক এমপি মাওলানা আতাউর রহমান খান ,   মুফতিয়ে আযম মাওলানা আহমদুল হক (রহ.) ,   পীরে কামিল মাওলানা জমির উদ্দিন নানুপুরী (রহ.) ,   কুতুবে যামান মাওলানা মুফতি আজিজুল হক (রহ.) এর সুযোগ্য খলিফা মাওলানা নুরুল ইসলাম (কদিম সাহেব হুজুর) (রহ.) ,   প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আইয়ুব (রহ.) ,   শায়খুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক (রহ.) এর মতো বরেণ্য ওলামা-মশায়েখ।