Skip to main content

রংধনু

সাহিত্যের গুণে প্রান রক্ষা

আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ যুবায়ের


হাজ্জাজ তাঁর প্রহরীকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন- রাতে কাউকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পেলে ওখানেই যেন তাকে শেষ করে দেয়া হয়। প্রহরীরা বাদশাহর এমন কঠিন নির্দেশ পেয়ে সন্ধ্যার পর থেকেই গুরুত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করা শুরু করলো।
টহলরত অবস্থায় একদল প্রহরী কয়েক যুবককে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পেলো। তাদেরকে আটক করা হলো। প্রহরীদলের প্রধান তাদেরকে পরিচয় জিজ্ঞেস করলো-
আটক হওয়া যুবকদের প্রথমজন বললোআমি এমন এক বাবার পুত্র/ যার কাছে মাখজুমী ও হাশেমী গোত্র/মাথা করে অবনত/তিনি অস্ত্রের বলে বের করেন/তাঁদের রক্ত ও অস্ত্র আছে যত।
এমন পরিচয় শুনে প্রহরীদল ভাবলোএই যুবক হয়তো বাদশাহর খুব কাছের কারো সন্তান হবে। তাই আপাতত তাকে তারা নিজেদের হেফাজতে রাখলো।
দ্বিতীয় যুবককে জিজ্ঞেস করা হলো- তুমি কেসে বলল- এমন একজন মানুষ আমার বাবা/ যার চুলা থেকে কখনো ডেগ নামানো হয় না/যদি কখনো তা নামে/ মানুষ ফিরে চলে বেদনার সাথে/আপনি দেখবেন তাঁর চুলার পাশে/মানুষকে দলে দলে/ কেউ খাচ্ছে দাঁড়িয়েকেউবা আবার বসে বসে।
এ যুবকের এমন রহস্যময় উত্তর শুনে প্রহরীরা ভাবলোসে হয়তো কোন উঁচু ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। আপাতত নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত তাকেও সম্মানের সাথে তারা নিজেদের দায়িত্বে রাখলো।
এবার তৃতীয়জনের পালা। তাকে সেই একই প্রশ্ন- তোমার পরিচয় বলো। প্রথম এবং দ্বিতীয় জনের মতো  সেও ছন্দ সাজিয়ে বলল- আমার বাবার অন্তরে/ সাহস ও শক্তি ভর করে/ তলোয়ার দিয়ে কাতারে কাতারে/ সবকিছু রাখেন সদা দাঁড় করিয়ে/ কোন ডর ভয় নেই তার হৃদয়ে/যখন ভয়ঙ্কর যুদ্ধে ঘোড়াও আসে পালিয়ে।
প্রহরীদলের কর্তারা এবারও দ্বিধায় পড়ে গেল- তারা ভাবলোসে হয়তো কোন বীরসেনানীর ছেলে। ভয়ে ভয়ে তারা তাকেও নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নিল।
সকালে বাদশাহর দরবারে তাঁদেও রহস্যময় কাহিনী পেশ করা হল এবং যথাসময়ে তাদেরকে তার সামনে হাজির করা হল। বাদশাহ পুরো ঘটনা শুনে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন- রহস্য ছেড়ে সত্যি করে বলো তো তোমরা কারা?
এবার পর্দা সরে গেল। সবার সামনে প্রকাশিত হল নতুন পরিচয়। আটক হওয়া প্রথম যুবকটির বাবা একজন নাপিত। বাবার চুল কাটা ও ছাঁটার পেশাকে সে অন্যভঙ্গিতে তুলে ধরেছে। দ্বিতীয় যুবকটি একজন খাবার বিক্রেতার সন্তান। ডেগ-পাতিলের কিচ্ছা শুনিয়ে সে তার বাবার পরিচয় দিয়েছে। আর শেষেরজনতার বাবা একজন সামান্য তাঁতি। কাপড় বোনা ও তৈরী করা তার একমাত্র পেশা।
বাদশাহ তাদের সাহিত্য ও ভাষা এবং বর্ণনাভঙ্গি দেখে বিস্মিত হলেন। তিনি তার সভাসদকে বললেন- তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে ভাষা ও সাহিত্য শেখাও। আল্লাহর কসমযদি এ যুবকগুলোর এমন অসাধারণ সাহিত্যজ্ঞান না থাকতআমি সত্যিই তাদেরকে হত্যার নির্দেশ দিয়ে দিতাম।
প্রিয় বন্ধুরা- ফেব্রয়ারী মাস আমাদের বাংলা ভাষা আন্দোলনের মাস। এ মাসে আমাদের বীরেরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তাই এসোআমরা আমাদের বাংলা ভাষাকে ভালোবাসি এবং এর ব্যবহারে সচেতন হই। বাংলা ভাষা নিয়ে গর্ব করি। জীবনের সব ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ বাংলার চর্চায় মনোযোগী হই। বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ ও এর সৌন্দর্যকে সারা পৃথিবীময় ছড়িয়ে দিয়ে সেইসব বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি।

Popular posts from this blog

মার্চ ২০১৪

বিশ্বসেরা আদর্শ বালক মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ নিত্য দিনরাতের হয় আনাগোনা। বনের সুরভি ফুলে মুখরিত হয় চিত্ত আল্পনা। আঁধার লুকোয় , আলোর আগমন ঘটে। ফুল ফোটে। নদী উদ্বেলিত হয় প্রবহমান স্রোতে ; হৃদয় আকৃষ্ট হয় তার মনোমুগ্ধকর কলকল প্রতিধ্বনিতে। পাখি গান করে। পর্বত চিরে ঝরনা ঝরে। চিত্রক প্রকৃতির চিত্র আঁকে। কবি রচনা করে কবিতা Ñ এ সবই হলো পৃথিবীর নিয়মিত বিধান। আর এ বিধান থেকেই আমরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে শিখছি। তাইতো অবলীলায় কবির ভাষায় বলতে পারি , ‘ পৃথিবীটা হলো শিক্ষাঙ্গন ’ । শিক্ষার এ ধারায়ই কোনো মহামনীষীর উত্তম আদর্শ অনুসরণ করে মানুষ হতে পারে আদর্শবান , আপন জীবন গড়তে পারে উজ্জ্বলময় এক অতুলনীয় জীবনে , বাল্যে হতে পারে একজন সেরাদশ আদর্শ বালক , আর নৈতিকতায় এক গরিষ্ঠ নৈতিক , কর্মজীবনে পদার্পণ করে হতে পারে সমাজের যোগ্যনেতা এবং শিষ্টাচারে আদর্শ শিষ্টাচারক।

মুফতী আমিনী রহ. স্মরণ সংখ্যা-২০১৩

মুফতি আমিনী- ভাঙা ভাঙা স্বরে সোনা ঝরানো কথা আর শুনবো না! - ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী এক. মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এখন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। বুঝি নি , এতো তাড়াতাড়ি .. এতো অসময়ে .. এতো দুঃসময়ে হঠাৎ করে তিনি চলে যাবেন! সেদিন রাতে এতোটা ‘ ঘুম-কাতুরে ’ না হলেও পারতাম! গভীর রাতে অনেক ফোন এসেছে , ধরতে পারি নি! সময় মতো তাঁর মৃত্যু সংবাদটা জানতে পারি নি! ফজরে উঠে দেখি ; অনেক মিসকল। সাথে একটা ‘ মোবাইলবার্তা ’ Ñ ‘ মুফতি আমিনী আর নেই ’ ! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!! শোক-বিহ্বলতায় আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম! শোকস্তব্ধ এতিমের মতো হাহাকার করতে লাগলো ‘ এতিম ’ মনটা! তাঁকে এভাবে হঠাৎ করে হারানোর শোক অনেক বড় শোক! কেননা , এ শোক প্রিয় উস্তায হারানোর শোক!

ইন্তেকাল

চলে গেলেন নিভৃতচারী আধ্যাত্মিক মনীষী   মুহাদ্দিস আল্লামা   নুরুল ইসলাম জদীদ (রহ.) হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর একে একে আমাদের মুরব্বীগণ বিদায় নিয়ে যাচ্ছেন। গত পাঁচ-ছয় বছরে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন জাতির অকৃত্রিম অভিভাবক ,   জাতীয় খতিব মাওলানা ওবাইদুল হক রহ. ,   খতিব মাওলানা আমিনুল ইসলাম (রহ.) ,   সাবেক এমপি মাওলানা আতাউর রহমান খান ,   মুফতিয়ে আযম মাওলানা আহমদুল হক (রহ.) ,   পীরে কামিল মাওলানা জমির উদ্দিন নানুপুরী (রহ.) ,   কুতুবে যামান মাওলানা মুফতি আজিজুল হক (রহ.) এর সুযোগ্য খলিফা মাওলানা নুরুল ইসলাম (কদিম সাহেব হুজুর) (রহ.) ,   প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আইয়ুব (রহ.) ,   শায়খুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক (রহ.) এর মতো বরেণ্য ওলামা-মশায়েখ।